রাজধানীর উত্তরখানে মা ও দুই সন্তানের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য এখনো কাটেনি। দুজনকে হত্যার পর তাদের যে কোনো একজন আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও পুলিশ। তবে মা ও ছেলেমেয়ের মধ্যে কে কাকে খুন করেছেন, আর কে আত্মহত্যা করেছেন, তা বুঝতে ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেছেন ফরেনসিক চিকিৎসক।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, কেউ বিষ পান করে থাকলে তা ভিসেরা প্রতিবেদনে আসবে। তখন হয়তো স্পষ্ট হবে, কোন দুজনকে হত্যার পর কে আত্মহত্যা করেছেন। গত রবিবার রাতে উত্তরখানের ময়নারটেকের একটি বাসা থেকে জাহানারা বেগম মুক্তা (৫০), তার মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম (২০) ও ছেলে মুহিব হাসানের (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর মধ্যে মা ও মেয়ের লাশ ছিল বিছানায়, আর ছেলের লাশ মেঝেতে পড়ে ছিল। লাশগুলো ফুলতে শুরু করেছিল বলে দিন দুই আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গত সোমবার তিনজনের ময়নাতদন্তের পর ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওই তিনজনের মধ্যে জাহানারা বেগম মুক্তা এবং তার প্রতিবন্ধী মেয়ে আতিয়া সুলতানা মিমের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধে। আর জাহানারার ছেলে মুহিবের মৃত্যু হয়েছে গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। উত্তরখান থানাপুলিশ জানিয়েছিল, মুহিবের গলার বাঁ থেকে ডান দিকে ধারালো অস্ত্রের পোচ ছিল। পাশেই পড়ে ছিল একটি রক্তমাখা বঁটি। ঘরের দুই জায়গায় দুটি চিরকুট পাওয়া যায়। দুই চিরকুটের বক্তব্য একই, তবে হাতের লেখা আলাদা।
তাতে লেখা ছিল, আমাদের মৃত্যুর জন্য আমাদের ভাগ্য এবং আমাদের আত্মীয়স্বজনের অবহেলা দায়ী। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সম্পত্তি দান করা হোক। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই বাসা থেকে বিষের একটি বোতল ও এক পাতা ঘুমের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। এক পাতার ১০টি ট্যাবলেটের মধ্যে ৯টিই সেবন করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের দিন উত্তরখান থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেছিলেন, মুহিবের বাবার অকস্মিক মৃত্যুর পর অর্থ সংকটে ছিল পরিবারটি। এক সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় এবং আরেক সন্তানের চাকরি না হওয়ায় অনটন আর হতাশা থেকে তারা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরখান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান রিয়েল বলেন, তদন্তের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে ঘটনাটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা।