টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে। উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। অর্থায়ন নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় বাধা। একদিকে উদ্যোক্তা ঋণ পাচ্ছে না অন্যদিকে খেলাপিরা ঋণের টাকা আটকে রেখেছেন।
আবার সেই খেলাপিদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি ভালো গ্রাহকদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের শাস্তির ব্যবস্থা সবার আগে করতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের (ডিএসসিই) উদ্যোক্তা ক্লাবের আয়োজেন ‘উদ্যোক্তার উন্নয়নে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও বিপণন কৌশলের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার এসব কথা বলেন বক্তারা।
ডিএসসিইর উদ্যোক্তা অর্থনীতি কোর্সের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ও ডিএসসিইর গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী। সেমিনারে ‘সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ‘ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সমাজ ও মানুষকে বাদ দিয়ে কোনো প্রযুক্তি নয়। প্রযুক্তি পরিবেশকে ধ্বংস করছে নাকি উন্নতি করছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। প্রযুক্তির কারণে বিভক্তি ও বৈষম্য যেন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কেননা এখনো বিশ্বমানের প্রযুক্তিগুলো গুটি কয়েকের হাতেই বন্দি রয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে তারা ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন। তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে মাফ করে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে ভালো গ্রাহকরা খেলাপি হয়ে যেতে পারেন।
প্রফেসর মহাম্মদ মাহবুব আলী বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক যেমন অর্থায়ন করবে তেমনি নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ১০-১৫ দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে পারে। বাংলাদেশে উদ্যোক্তার উন্নয়নে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের উন্নয়ন ও যুগোপযোগী বিপণন কৌশল গ্রহণের বিকল্প নেই। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মসংস্থানের চাহিদা অনুসারে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির ও বিপণন কৌশলগুলোকে প্রায়োগিক হতে হবে। গতকালের সেমিনারে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসিআই ফরমুলেশনস লিমিটেডের পরিচালক এম. সামসুজ্জামান ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোরথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ তামজিদ উর রহমান।
ডিএসসিইর উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেহানা পারভীন ও সারাহ তাসনীম বক্তব্য রাখেন। এম. সামসুজ্জামান বলেন, যথাযথ বিপণন কৌশল না জানার কারণে উদ্যোক্তারা অনেক সময়ই ব্যর্থ হয়। তাই বিপণন কৌশলের পাশাপাশি মূল্য সংযোজনের কৌশলগুলো জানতে হবে। উদ্যোক্তা অর্থায়ন ব্যস্থাপনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সারা বিশ্বে মেধা ও প্রকল্প কৌশলের ওপর ভিত্তি করে ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা মর্টগেজের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক উদ্যোক্তাই বিকশিত হতে পারছে না।
অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলো যাচ্ছেতাইভাবে সুদ হার নির্ধারণ ও পরিচালনা করছে। মুনাফা বাড়াতে গিয়ে গুণগত মানে অবনতি হচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং খাত উদ্যোক্তাবান্ধব হতে হবে। কেননা দেশে এখনো ৩৪ শতাংশ মানুষের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এদেরকে চাকরিতে না পাঠিয়ে উদ্যোক্তা তৈরিতে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।