আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন আজ শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে থাকবেন আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের প্রবীণ নেতারা। বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের সম্মেলন ঘিরে শেষ সময়ের দৌড়ঝাঁপ ও তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে নিজের অবস্থান জানান দিতে দেখা গেছে পদপ্রত্যাশীদের। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত অবধি আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসভবনেও ভিড় করতে দেখা গেছে। এবার শ্রমিক লীগে নেতা নির্বাচনে বিতর্কমুক্ত ‘ক্লিন ইমেজ’ধারী নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে বিতর্কমুক্ত ক্লিন ইমেজধারীদের বেছে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বচ্ছতা ও সততার প্রশ্নে কেউ অকৃতকার্য হলে তাদের শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে যেন আনা না হয় এ বিষয়টিও জানিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শ্রমিক লীগের কয়েকজন নেতা গণভবনে দেখা করতে গেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বলে দিয়েছেন সবার আমলনামা তার জানা। শ্রমিক লীগে আর অযোগ্য ও অসৎ লোকের জায়গা হবে না। তিনি এ-ও বলেছেন, সততার প্রশ্নে শ্রমজীবী মানুষের প্রশ্নে যারা সর্বোপরি দেশের অগ্রযাত্রার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে, তারাই আসবে শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে।
শ্রমিক লীগের বর্তমান সভাপতি শুকুর মাহমুদ আবার একই পদে থাকতে চান। অন্যদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সংগঠনটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী। তবে নতুন করে তাদের নেতৃত্বে আসার কথা তেমন শোনা যাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যার এমন হুশিয়ারির পর শ্রমিক লীগের পদপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করলেও আগের মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেদের ইচ্ছার কথা তেমন দেখা যাচ্ছে না। তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শ্রমিক লীগে তাদের যে অবস্থানেই দেবেন সেখান থেকেই রাজনীতি করবেন। অধিকাংশরা পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতৃত্বের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। শ্রমিক লীগের বর্তমান কমিটির অনেক নেতার বিরুদ্ধেই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি পদবাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে চাকরি বাণিজ্যেরও। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে তাদের কথা উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এর আগেও আমার কোনো প্রত্যাশা ছিল না। নেত্রী আমাকে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসিয়ে সম্মানিত করেছেন। এবারও কোনো প্রত্যাশা নেই। তিনি আমাদের যেখানে যোগ্য মনে করে বসাবেন আমি তা সাদরে গ্রহণ করে নেব।’
অন্যদিকে সহ-সভাপতি ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আকন্দ আমাদের সময়কে বলেন, আমি বহু বছর ধরে শ্রমিক লীগের রাজনীতি করি। দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমি নেতৃত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করিনি, করব না। নেত্রীর দেওয়া আমানত অতীতেও সম্মানের সঙ্গে বহন করেছি, ভবিষ্যতেও করব। এর বাইরে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। এ-ও বিশ্বাস করি এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরিচ্ছন্ন ও সততার প্রশ্নে এক বিন্দুও ছাড় দেবেন না।
শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী এবং শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীরের বক্তব্যও অভিন্ন। তাদের ভাষ্য, সততা ও যোগ্যতার প্রশ্নে তারা যদি শেখ হাসিনার কাছে উত্তীর্ণ হন তবেই নেতা হবেন।
জানা গেছে, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি পদের জন্য ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য হুমায়ুন কবীর পরোক্ষভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাবীব হাসান মোল্লা আমাদের সময়কে জানান, তিনি ওয়ার্ড থেকে শ্রমিক লীগের রাজনীতি শুরু করেছেন। সেখানে থেকে নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে যেতে চান। তবে নেত্রী যদি তার থেকে পরিচ্ছন্ন কাউকে খুঁজে পান, তবে তাকে স্বাগত জানাতে কার্পণ্য করবেন না।
বর্তমান কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সহসভাপতি শাহজাহান খান, সরদার মোতাহের উদ্দিন, নূর কুতুব আলম মান্নান, আমিনুল হক ফারুক সভাপতি পদপ্রত্যাশী। সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে আছেন খান সিরাজুল ইসলাম, মু শফর আলী, প্রচার সম্পাদক কেএম আযম খসরু, দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুলতান আহমেদ, শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণবিষয়ক সম্পদক কাউসার আহমেদ পলাশ, ক্রাফট ফেডারেশন-বিষয়ক সম্পাদক এটিএম ফজলুল হকসহ বেশ কয়েকজন।
১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা লাভ করে জাতীয় শ্রমিক লীগ। ২০১২ সালের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক নেতা শুকুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক হন জনতা ব্যাংক ট্রেড ইউনিয়নের নেতা সিরাজুল ইসলাম।