ভারতের হাদরাবাদে গতকাল স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ খুশি। অনেকে পুলিশকে মিস্টি খাওয়াচ্ছেন। অনেকে বাজি পোড়াচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটি উৎসবঘন পরিবেশ। কিন্তু কেন?
গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে বহুল আলোচিত ধর্ষণ মামলার চার আসামি পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হয়েছে। মূলত এ ঘটনাকেই ভারতীয়রা নানাভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের ভূমিকায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গতকাল এমনই খবর জানিয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি হায়দরাবাদে এক নারী পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে ধর্ষকরা। এ ঘটনায় গোটা ভারত স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। পার্লামেন্ট থেকে রাজপথ এর প্রতিবাদ চলে। সাংসদ ও অভিনেত্রী জয়াবচ্চন ধর্ষকদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারার পক্ষে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কথা বলেন।
এ সব ঘটনার ধারাবাহিকতায় গতকাল পুলিশের এনকাউন্টারে চার ধর্ষকই নিহত হয়। এনকাউন্টারের আনুমানিক দুই ঘণ্টা পর প্রায় ২ হাজার লোক সমবেত হয়ে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে। তারা ‘পুলিশ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দেয়। অনেকে ফুল দিয়ে পুলিশকে শুভেচ্ছ জানান, অনেকে মিষ্টি বিতরণ করেন। পুলিশের কাজের ভূমিকা কোথাও কোথাও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। তিন লাখের বেশি টুইটার ব্যবহারকারী ‘হ্যাশ-ট্যাগের’ পুলিশের কৃতকর্মের সমর্থন করে।
বিবিসি বলছে, এর মূল কারণ আসলে ভারতীয় বিধি অনুসারে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এমনকি একটি মামলার রায় বেরোতে ১০ বছরও লেগে যায়। এ কারণে বিচার হাতে হাতে পেয়ে জনতা খুশি। প্রায় দশ মিলিয়ন মামলা এখনো বিচারের জন্য অপেক্ষমাণÑ এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ মামলাই হচ্ছে ধর্ষণের।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতার একটি বড় উদহারণ হলো ২০১২ সালের বহুল আলোচিত নির্ভয়া ধর্ষণকা-। ২৩ বছর বয়সী সেই নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা ভারত উত্তাল হয়েছিল। গোটা বিশ্বও তখন ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিল। বিচারের রায় মৃত্যুদ- হলেও তা কার্যকর নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে।
গত সাত বছর নির্ভয়ার মা আশাদেবী হতাশায় কাটিয়েছেন। এ এনকাউন্টারের ঘটনায় তিনি বলেন, ধর্ষকরা সাজা পাওয়ায় তিনি খুশি। তার কথায়, পুলিশ খুব বড় কাজ করেছে, আমি মনে করি, তাদের (পুলিশ) বিরুদ্ধে যেন কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের তদন্তের দাবি করেছে।