শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
মাগুরায় একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হাততালি দেন। এ ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয় ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে রাত ১২টার আগেই ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতাকর্মী শহরের সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন। প্রত্যেকে দলীয় সেøাগান দিতে থাকেন। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের
সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সেøাগান ও হাততালি দিতে থাকেন। এ সময় ঘোষণা মঞ্চ থেকে শোকের দিনে হাততালি না দিতে ছাত্রদলকে বারবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু তারা তা মানেননি। তারা কলেজ গেটের বাইরে এলে পেছন থেকে ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জেলা ছাত্র দলের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, শহীদ মিনার এলাকার ঘোষণা মঞ্চ থেকে হাততালির বিষয়ে নিষেধ করতে বলা হলে কর্মীদের নিবৃত্ত করি। তার পরও ছাত্রলীগ হামলা করে। এতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল মিশরী (৩৫), যুবদল নেতা রুমি হোসেন (৪০), আদর্শ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইফতেখার হোসেন অঙ্কুর (২০) আহত হয়েছে।’
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন মুক্তা বলেন, ‘রাতে জেলা ছাত্রলীগ সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে নেতাদের সাথে বেরিয়ে আসে। ছাত্রলীগের সাথে কারো কোনো সংঘর্ষ হয়নি। জেলা ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ইবিতে হট্টগোল
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে একুশে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের সময় হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশ এ ঘটনা ঘটান। আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাহবুবুল আরফিন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের আনোয়ার হোসেন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি শামছুল ইসলাম জোহা ও সাধারণ সম্পাদক মীর মোর্শেদুর রহমানের নেতৃত্বে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর নেতৃত্বে র্যালি বের হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে পুষ্পস্তবক অর্পণপর্বে মিলিত হয়।
এ সময় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের তিন কর্তাব্যক্তির শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা সমিতি, বিভিন্ন আবাসিক হল, বিভাগ, বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। এর মধ্যে শিক্ষক সমিতির পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ নির্বাচন কমিশন ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা।
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ নির্বাচন কমিশন ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নাম ঘোষণা করায় তাৎক্ষণিক বেদিতে হট্টগোল শুরু করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ একাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আরফিন, কর্মকর্তা সমিতির একাংশের সভাপতি শামছুল ইসলাম জোহা ও সাধারণ সম্পাদক মীর মোর্শেদুর রহমান। এ সময় সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কিছু সময় বন্ধ থাকে। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
জুতা পায়ে শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ নেতা
কুমিল্লার মুরাদনগরে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে জুতা পায়ে দিয়ে শহীদ মিনারে গেলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহাম্মদ হোসেন আউয়াল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উপজেলার ডিআর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবস্থিত শহীদ মিনারে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এ সময় জুতা পায়ে নিয়ে ওই নেতা শহীদ বেদিতে উঠলে উপস্থিত নেতাকর্মী তথা আশপাশের সচেতন লোকজন তাকে জুতা খুলে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কারও বাধা আমলে না নিয়ে শহীদ বেদিতে জুতা নিয়েই উঠে পড়েন। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জুতা পায়ে দুই শিক্ষক
বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী কেও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক ও সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুতা পায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
শুক্রবার সকালে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে ওঠেন এবং ছবি তোলেন।
জুতা পায়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবদনের ঘটনায় এলাকায় মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বেদিতে জুতা পায়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বুলবুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শহীদ মিনারে আমি শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। এ সময় আমার মনে ছিল না যে আমার পায়ে জুতা আছে। এ ঘটনার জন্য আমি খুব লজ্জিত, আমাকে সবাই ক্ষমা করে দেবেন। এমন ঘটনা আর ঘটবে না।
রাজধানীর ডেমরায় ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সময় জুতা নিয়েই বেদিতে ওঠেন অনেকে। শ্রদ্ধার ফুলগুলো নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি পর্যন্ত করেছেন কিছু অসাধু। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ডেমরার চৌরাস্তার শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় শহীদ মিনার সংলগ্ন্নে থানা ট্রাফিক পুলিশরাও এ দৃশ্য দেখে কোন প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রদীপ মোহন্ত, নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া; সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ, নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা; মোখলেছুর রহমান, মাগুরা প্রতিনিধি; আশিক বনি, ইবি প্রতিনিধি