আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনেই বাঙালি জাতি তাদের চিরকালীন দাসত্ব ঘুচিয়ে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল। সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে। তারা ক্ষমতার বদলে বুলেট আর কামানের গোলায় একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। ২৫ মার্চের কালরাতে ঘুমিয়ে থাকা নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্যাংক, কামান নিয়ে হামলা চালায়। ঢাকা শহরে বয়েছিল রক্তের বন্যা। অপারেশন সার্চলাইট নামের এক বর্বর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে তারা শুরু করেছিল মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম এক গণহত্যা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগে ৭ মার্চের বিশাল জনসভায়ও বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই নৃশংস নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এক সর্বাত্মক জনযুদ্ধ। আমাদের পুলিশ, ইপিআর, সেনাবাহিনী, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ সবাই মিলে এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রাণপণ এক যুদ্ধে, যার লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, মুক্তি। দীর্ঘ নয় মাসের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা হারিয়েছি ৩০ লাখ শহীদকে, দুই লাখ মা-বোনের ওপর চলেছিল সীমাহীন বর্বরতা। এত তিতিক্ষার বিনিময়েই আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করি।
কিন্তু এবারের স্বাধীনতা দিবসে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। বিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে কাঁপছে। আমরা এতদিন যেভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করে আসছি তার ব্যত্যয় ঘটছে এবার। কারণ করোনা ভাইরাস। করোনার কারণে আমাদের দেশের সরকার কয়েক দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তার আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে এবং মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানসহ সবকিছুই সীমিত করা হয়েছে। তবে একাত্তরে যেমন আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলাকে মোকাবিলা করেছি, এই করোনাযুদ্ধেও আমাদের সাফল্য অর্জন করতে হবে। সে জন্য সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য করোনা মোকাবিলা করা।