গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অস্বচ্ছতার অভিযোগ করেছেন স্বীকৃতি না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল সোমবার বিকালে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও স্বীকৃতি বঞ্চিত অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা এ অভিযোগ করেন।
অনুষ্ঠানে বিএলএফ (মুজিব বাহিনীর) মুক্তিযুদ্ধকালীন সহকারী উপজেলা কমান্ডার আকম আক্তারুজ্জামান কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গজারিয়া উপজেলা শত্রুমুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর। তবে পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বঞ্চিত এ বাহিনীর অধীনে গজারিয়ায় যুদ্ধ করা অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এ বাহিনীর যেসব সদস্য ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুন ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসেছিলেন, কেবল তাদেরই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এ বাহিনীর অধীনে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে যেসব মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকৃতি বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, যারা আমার অধীনে স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের অনেকে যখন আমাকে প্রশ্ন করেন, আমাদের পরিচয় কী, তখন আমি কিছুই বলতে পারি না। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চললেও স্বীকৃতি বঞ্চিত ১৮ জনের মধ্যে মাত্র দুজনকে নির্বাচিত করেছে যাচাই-বাছাই কমিটি। যার ফলে বাকি ১৬ জন পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের ভূমিকা এবং তাদের কর্মকা-ের প্রতিবাদ জানান আকম আক্তারুজ্জামান কামাল।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বঞ্চিত আজিজুল হক, হারেস প্রধান ও আরশাদ আলীসহ কয়েকজন জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর মেঘনাঘাট ও বাউশিয়াতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা। সে যুদ্ধে ৪ পাকসেনা এবং একজন সাধারণ মানুষ মারা গিয়েছিল। অথচ যাচাই-বাছাই কমিটি এ যুদ্ধকে অস্বীকার করছে। তারা অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে গজারিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল অনেক কম। আজ যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করছেন তাদের অনেকের জন্মই হয়নি সে সময়। অথচ যারা প্রকৃত অর্থেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের অনেকে স্বীকৃতি বঞ্চিত।
আরেক মুক্তিযোদ্ধা এবিএম জামাল উদ্দিন জানান, শহীদ নজরুল ছিলেন গজারিয়ার বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর প্রধান। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী গজারিয়ায় দশটি ক্যাম্প গড়ে তোলে। তাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উন্নত অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শহীদ নজরুল ইসলাম ভারতে যান। তিনি যখন দেশে ফেরেন (৮ ডিসেম্বর) তখন গজারিয়ার বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আকম আখতারুজ্জামান খান কামাল। আর দেশে ফিরে আরেক ভাগের নেতৃত্ব দেন নজরুল ইসলাম নিজে। ৯ ডিসেম্বর যুদ্ধে নজরুল ইসলাম শহীদ হওয়ায় আখতারুজ্জামান কামালের অধীনে যুদ্ধ করা বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর সদস্যদের স্বীকৃতি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।