জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমানো হচ্ছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ বন্ডেও ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এখন এক কোটি টাকা নির্ধারণ হচ্ছে। আগামী মাসে এ বিষয়ে একটি বিধিমালা জারি করা হতে পারে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেও সরকারের পক্ষে জনগণকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও মাত্র দুই মাসে এ খাত থেকে ৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা নেওয়া হয়ে গেছে। অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার যে লক্ষ্য ধরেছিল তার ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, আরও আগেই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। কারণ অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদব্যয় কমাতে হলে এই পদক্ষেপ নিতে হবে। জানা গেছে, বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্র,
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে যে কোনো ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন এবং যৌথ নামে বিনিয়োগের সীমা রয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী এক ব্যক্তি বিনিয়োগকারী সঞ্চয়ের তিন স্কিমে ৩০ লাখ টাকা করে মোট ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন; কিন্তু আগামীতে এই তিন স্কিমের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ তিন মাস মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ বিনিয়োগসীমা ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি অন্য একটি স্কিমে আরও ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। ফলে এই তিন স্কিমে সর্বোচ্চ একক নামে ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না।
একইভাবে বর্তমানে যৌথ নামে সঞ্চয়পত্রে একেকটা স্কিমে ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। এ ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের তিন স্কিমে ৪৫ লাখ করে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যেত। আগামীতে এ সীমা কমিয়ে এক কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঋণ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সিলিংস নেই। তাই এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সিলিংস থাকা প্রয়োজন। সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে দুই পার্সেন্ট হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। পাশাপাশি এসব বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে সরকারকে প্রায় ১৬ শতাংশের ওপর সুদ দিতে হচ্ছে। তাই একই ব্যক্তি দুটি সুবিধা প্রদান করা সমতার নীতির পরিপন্থী।