করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায় হলো সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দিনে দিনে এই বিধিগুলো মানার ব্যাপারে মানুষ উদাসীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর-গঞ্জে মানুষ এখন স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করছে। কারও মুখে মাস্ক নেই, গণপরিবহনে আর হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেই, শহরের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে করোনায় মৃত্যু কিছুটা কমলেও এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। আর সংক্রমণও আগের মতোই বহাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো দেশে পর পর তিন সপ্তাহ করোনায় মৃত্যুর হার পাঁচজনের নিচে থাকলেই রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বলা যাবে। আমাদের দেশে এখনো এ মহামারীতে দৈনিক মৃত্যু দশের ওপরে রয়েছে।
আশা ছিল, অক্টোবর নাগাদ করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে। এই আশা সত্য হচ্ছে না। কেননা শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। এখনই শীতপ্রধান দেশগুলোয় সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। তবে এতদিনে এর চিকিৎসা সম্পর্কে সবার ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। ফলে ইউরোপ, আমেরিকার দেশে দেশে রোগের সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যুহার আগের মতো আর নেই। প্রতিবেশী ভারতে এখনো করোনা অনিয়ন্ত্রিত। তবে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংখ্যায় চীন, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে ভারতের পরই চলে আসছে। ফলে আমাদের সতর্ক হওয়া জরুরি।
এখন বোঝা যাচ্ছে, একমাত্র নির্ভরযোগ্য টিকাই পারবে করোনার সংক্রমণ থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে। তবে সেটিও সহজে সুলভ হবে বলে মনে হয় না। এক সময় মনে হয়েছিল, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ টিকা পাওয়া যাবে। চীনের টিকা সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তাও সহজ হচ্ছে না। একপর্যায়ে ভারত থেকে দ্রুত টিকা পাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। এখন এটিরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পশ্চিমে কোনো কোনো উদ্যোগ এগিয়ে যাচ্ছে আবার কিছু মাঝপথে থেমে গেছে। এর মধ্যে সুখবর হলো বাংলাদেশের একটি কোম্পানি টিকা আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সম্প্রতি তারা জানিয়েছেন, শিগগিরই তাদের টিকা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর নিরীক্ষা চালানো হবে। এটি সফল হলে গোষ্ঠীগত পরীক্ষা চালানো হবে।
সব মিলিয়ে আমাদের ধারণা, আগামী বছরের মার্চ নাগাদ টিকা পাওয়া যেতে পারে। দেশি হোক, বিদেশি হোক- যে কোনো একটি সূত্র থেকে টিকাপ্রাপ্তি ঘটবে বলেই ওয়াকিফহাল মহল মনে করছে। আপাতত প্রয়োজন হলো সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর এ জন্যও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এত জরুরি। আমাদের দেশে মানুষ যে কোনো নিয়মের ক্ষেত্রেই প্রথম পর্যায়ে কড়াকড়ি মেনে চললেও ধীরে ধীরে সর্বত্র ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে। সেটি ট্রাফিক আইন থেকে যে কোনো বিধির ক্ষেত্রেই সত্য। কিন্তু করোনা তো অনেকের জন্যই জীবন মরণের প্রশ্ন নিয়ে হাজির হচ্ছে। ফলে এই রোগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা সবার কর্তব্য। নিজের অবহেলার শিকার অন্যকে করার অধিকার আমাদের কারও নেই। এ কথাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।