করোনা মহামারীর কারণে রাজধানীতে কুমারী পূজা ছাড়াই গতকাল শনিবার মহাঅষ্টমী উদযাপন হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও ঐতিহ্যবাহী এ পূজার আয়োজন করেন ভক্তরা। এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সনতান ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশই গতকাল শনিবার বাসায় বসে অঞ্জলি দিয়েছেন। তবে করোনা পরিস্থিতি ও বৃষ্টির কারণে আগের দুদিনের তুলনায় অষ্টমীতে ভিড় ছিল কিছুটা বেশি। রীতি অনুযায়ী আজ রবিবার হবে মহানবমীর পূজা। বাঙালির কাছে দুর্গা ঘরের মেয়ে। চার দিন বাপের বাড়িতে থেকে সোমবার দশমীতে বিদায়ের পালা। ফের বছরভর অপেক্ষা। নবমী মানেই তাই মন খারাপের শুরু।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার মহাঅষ্টমীর ঐতিহ্য কুমারী পূজার আয়োজন না থাকায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়নি তেমন। তবে গতকাল সকালে ষোড়শ উপাচারে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। ১০৮ পদ্ম ও প্রদীপ দিয়ে দুর্গার আরাধনা করা হয়। ভোর ৫টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা ও মহাঅষ্টমীর ব্রতোবাস শুরু হয়। এর পর সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭টা ২৩ মিনিটের মধ্যে হয় সন্ধিপূজা। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। তবে করোনাকালে বাসায় থেকে এ আচার পালনকে উৎসাহিত করার জন্য টেলিভিশনে ও ফেসবুকে সরাসরি অঞ্জলি প্রদান অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
করোনার সংক্রমণ ও বৃষ্টির কারণে পূজা অর্চনাকারীদের জন্য এবার পরিবেশটা বেশ প্রতিকূল। তার পরও থেমে নেই দুর্গাভক্তরা। অন্যান্যবারের মতো উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়লেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি দিতে পূজাম-পে এসেছেন অনেকেই। আগের দুদিনের তুলনায় তাই শনিবার ভিড় কিছুটা বেশি দেখা গেছে রাজধানীর পূজাম-পগুলোতে। কলাবাগান মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই অঞ্জলি দিচ্ছেন অনেক ভক্ত। তবে ভিড় না করতে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকেও নজরদারি রাখা হয়েছে। অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে জয়কালী মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, রমনা কালীমন্দির, শ্যামবাজার শিবমন্দির, খামারবাড়ী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির ও স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরসহ নগরীর অন্যান্য ম-পেও। তবে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভিড় ছিল বেশি। সন্ধ্যার পর অবশ্য সেই ভিড় কমতে শুরু করে। আজ মহানবমীর দিনে ভিড় আরও বাড়বে বলে আয়োজকরা মনে করছেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ রবিবার ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ব ও বিহিত পূজা। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমী হচ্ছেÑ দেবীকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার দিন। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পর দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। নবমী নিশিথে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়। এসব বিবেচনায় অনেকেই মনে করেন নবমীর দিন আধ্যাত্মিকতার চেয়েও অনেক বেশি লোকায়ত ভাবনায় ভাবিত থাকে মন। এ কারণে ম-পে ভিড়ও বাড়ে।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, করোনা সতর্কতা ও বৃষ্টির কারণে অনেকেই ম-পে প্রদর্শনে আসেননি। তবে নবমীর দিনে তারা আসবেন। এ কারণে ম-পগুলোতে ভিড় বাড়বে। সেটি বিবেচনায় রেখে ভক্ত-দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
করোনার মহামারীর কারণে সন্ধ্যা আরতির পর দেশের সব পূজাম-প বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে আয়োজকদের। মূলত এবার উৎসবসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ। তাই এবারের দুর্গোৎসবকে দুর্গাপূজা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এবার কোনো আরতি প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। দোকানপাট নেই। হবে না বিজয় শোভাযাত্রাও। প্রতিমাগুলো অন্যান্য বছরের মতো ঢাকেশ্বরী এলাকায় জড়ো করা হবে না। প্রত্যেক ম-প থেকেই প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন করা হবে। আবার আগে প্রতি ম-প থেকে ২-৩টা ট্রাকে করে যে নাচ-গান হতো, সেটিও এবার হবে না। একটি ট্রাকে করে বাড়তি লোক না নিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার পূজাম-পের সংখ্যাও কমে গেছে। গত বছর সারাদেশে ম-প ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। এবার ৩০ হাজার ২১৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৮৫টি কম। সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, ২০২০ সালে মা দুর্গার আগমন ঘটেছে দোলায় চড়ে। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমনের অর্থ মড়ক। ফলে পুজোর বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা-বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়।