ভারী বর্ষণে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে প্রায় ১০ হাজার মৎস্য ঘের ও পুকুর। বিশেষ করে জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো। পানি কমতে শুরু করলেও হাসি নেই মৎস্যচাষিদের মুখে, ঘেরের মাছ বের হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক মৎস্যচাষি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণে এই দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের মৎস্যচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে তার মাছের ঘের তলিয়ে বের হয়ে গেছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মাছ। শুধু তারই নয়, ডুবে গেছে এলাকার বহু মানুষের ঘের ও পুকুর। অনেক মাছচাষি-ই নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলার গোলবানু, মহিবুন্নাহার, ছাহেরা বেগম, হাওয়া বেগম, শাহিনুর বেগমসহ কয়েকজন বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের থাকার ঘর, রান্না ঘর, গোয়াল ঘর সব ডুবে গেছে। দুই-দিন ধরে দোকান থেকে চিড়া, মুড়ি ও রুটি কিনে খেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি না নামলে আমাদের কষ্টের সীমা আরও বেড়ে যাবে।
শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মৎস্যঘের ব্যবসায়ী সোহেল ফরাজী ও সোবহান শেখ বলেন, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ ছেড়েছিলাম। কিছুদিন পরে মাছ বিক্রি করার ইচ্ছা ছিল। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল। এখন কীভাবে চলব জানি না।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আমরা পানিবন্দি মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বলেন, অবিরাম বর্ষণে বাগেরহাটের ৯ হাজার ৭শ ৬১টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে চাষিদের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এই ক্ষতি পোষাতে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনার জন্য চেষ্টা করার কথাও ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করে বাগেরহাট জেলা চিংড়িচাষি সমিতির সভাপতি মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রত্যেকটি দুর্যোগেই বাগেরহাটের মৎস্যচাষিদের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবে এসব ক্ষতির পরিমাণ কম বলা হয়। এবারের বৃষ্টিতে বাগেরহাটের প্রায় ১৫ হাজার ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। চাষিদের ক্ষতি পোষাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, অতিবর্ষণের কারণে বাগেরহাট জেলায় বরাবরের মতো এবারও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাটির সময় আবার সেই পানি নেমেও গেছে। এতে ভেসে গেছে কিছু মাছের ঘেরও। সব মিলিয়ে কী পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সেই তালিকা তৈরির কাজ করছি। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার আমরা বিভিন্ন উপজেলায় পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোয় খাদ্যশস্য প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।