বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এর সাজা মৃত্যুদ- করার দাবিতে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের’ পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার এ নোটিশ পাঠান।
গতকাল ই-মেইল ও ডাকযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক সচিব, শিক্ষা সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয় সচিব, আলিয়া মাদ্রাসা
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, দেশে দুধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি যেমন আলিয়া মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক এবং এ মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় কোটির কাছাকাছি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। এ মাদ্রাসাগুলোতে লাখ লাখ কোমলমতি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে পুরুষ শিক্ষকদের অধীনে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিক্ষক দ্বারা। যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের কারণে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীর মৃত্যুও হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পুরুষের সঙ্গে পুরুষের জোরপূর্বক যৌন সঙ্গমকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। ফলে এ ধরনের অন্যায় করেও শাস্তি অনেক কম থাকায় মাদ্রাসা শিক্ষকরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।
নোটিশে দ-বিধির ৩৭৫ ধারায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন করে পুরুষ কর্তৃক ছাত্রদের বলাৎকারকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে এ ধরনের অপরাধে ধর্ষণের মতোই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে মাদ্রাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করে বিশেষত শিশুদের মহিলা শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি মাদ্রাসা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে নোটিশে। এ ছাড়া কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নোটিশ গ্রহীতাদের আগামী ৫ দিনের মধ্যে নোটিশে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন’কে প্রতিবেদন আকারে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এতিম এবং সমাজের বঞ্চিত শিশু-কিশোররা পড়াশোনা করে থাকে। এ কারণে তাদের ওপর নির্যাতন হলেও যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ বা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে দেখা যায় না। এতে অপরাধীরা এ ধরনের জঘন্য এবং ঘৃণ্য কাজ করেও অতি সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনো সভ্য সমাজে কোনোভাবেই কাম্য নয়। কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।