প্রশ্ন ওঠায় ফের ট্রায়ালের চিন্তা হচ্ছে অক্সফোর্ডের টিকার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে এই টিকা উদ্ভাবন করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তারা ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যে পরীক্ষামূলক এ টিকার চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চালিয়েছে। গত সোমবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা ওই ট্রায়ালে গড়ে ৭০ শতাংশ সফলতা পাওয়ার কথা জানায়। এর মধ্যে বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবককে দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে টিকার সাফল্য ৬২ শতাংশ। আর খুব ছোট অংশকে একটি ডোজ দেওয়ার পর আরেকটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ না দিয়ে ভুল করে অর্ধেক ডোজ দেওয়া হয়েছিল। তাদের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার দাঁড়ায় ৯০ শতাংশ। এ ফল নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
বলা হচ্ছে, যেখানে দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ দিচ্ছে ৬২ শতাংশ সফলতা, সেখানে দেড় ডোজেই সাফল্য কীভাবে ৯০ শতাংশ হয়? অর্ধেক ডোজ কিভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পূর্ণাঙ্গ ডোজের চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়? গবেষকরা এ জন্য এখন অক্সফোর্ডের টিকার চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের সম্পূর্ণ তথ্যের অপেক্ষা করছেন। এ বিভ্রান্তি এড়াতে অ্যাস্ট্রাজেনেকাও নতুন ট্রায়ালের চিন্তাভাবনা করছে।
প্রশ্ন ওঠায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টিকাটির অনুমোদন পাওয়া কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের অধ্যাপক পিটার ওপেনশ’ বলেন, আমাদের ট্রায়ালের সম্পূর্ণ তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলো এ ফলকে কিভাবে দেখে। টিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর পর্যালোচনার ফল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি।
অক্সফোর্ডের এ টিকার মূল্যায়ন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএকে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। এর মধ্য দিয়ে অনুমতি পাওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল টিকাটি। প্রায় ১০ মাস ধরে টিকাটি নিয়ে গবেষণা করছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ট্রায়ালে ৭০ শতাংশ সফলতা পাওয়ার দাবির পর গত বৃহস্পতিবার সরকার ওই নির্দেশ দেয়। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক বলেন, এমএইচআরএ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর পরই যেন ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরু করা যায়, সে জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য সরকার কাজ করছে।
এদিকে, রাশিয়ার তৈরি করোনার ‘৯২ শতাংশ কার্যকর’ টিকা স্পুটনিক ৫-এর ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করবে ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি হেটেরো। স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের অফিসিয়াল টুইটার পেজে বিষয়টি জানিয়ে বলা হয়, আগামী বছরের শুরুতে এসব ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে ট্রায়ালের সাফল্য প্রশ্নের মুখে পড়ায় অক্সফোর্ডের করোনার টিকার দ্রুত অনুমোদন পাওয়া কষ্টকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভ্রান্তি এড়াতে এখন নতুন করে ট্রায়ালের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। খবর : বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।
রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘স্পুটনিক-৫’ ভ্যাকসিন উৎপাদনের পর তা বিশ্ববাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করছে আরডিআইএফ ও হেটেরো। এখন ভারতে এ ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের নেতৃস্থানীয় জেনেরিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হেটেরো ভারতে প্রতিবছর বিশ্বের প্রথম করোনা ভাইরাসের নিবন্ধিত ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজ উৎপাদনে রাজি হয়েছে।
আগস্টে রাশিয়া প্রথম ‘স্পুটনিক-৫’ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। এটি বিশ্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন পাওয়া প্রথম করোনার ভ্যাকসিন। অক্টোবরে ‘এপিভ্যাককরোনা’ নামে দ্বিতীয় ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় রাশিয়া।