প্রথমে যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন তারা। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর পর প্রথমে দুজন বাসের চালক ও সহকারীকে অস্ত্র টেকিয়ে জিম্মি করেন। আরেকজন তাদের থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন। আর কয়েকজনের কাজ হচ্ছে যাত্রীদের থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়া। এতে কোনো যাত্রী বাধা দিলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে, এমনকি কুপিয়ে জখম করা হয় তাকে।
এভাবেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছিল দলটি। নিয়মিত এই ডাকাতি করে এলেও তারা এতদিন ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি চলতি মাসেও একই স্টাইলে ডাকাতি করেছেন তিনবার। শেষ পর্যন্ত ধরা খেলেন। গত রবিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া এলাকা থেকে পিস্তল, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- ডাকাতদের সর্দার মো. ইয়াহিয়া জয়নাল, ছাবের আহমদ, ছলিম উল্লাহ, আবুল কালাম, শাহ আমান বাটু ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এদের মধ্যে শেষজন ছাড়া অন্য সবার বাড়ি কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। আবদুল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামের দক্ষিণ পতেঙ্গায়।
২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালীতে বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বাকলিয়ার নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে যাত্রীবেশে ডাকাত দলের ৬ সদস্য একটি বাসে উঠেন। সৌদিয়া পরিবহনের বাসটি (চট্ট মেট্রো-ব-১১-১১২৫) চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী এলাকায় পৌঁছার পর ডাকাত দলের তা-ব শুরু হয়। বাসের চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। কিছু যাত্রী ডাকাতদের বাধা দিলে তারা গুলি ছুড়ে। এতে দুই যাত্রী গুলিবিদ্ধ হন ও একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। বাস কক্সবাজারের ঈদগাহ এলাকায় পৌঁছলে মালামালসহ নেমে যান ডাকাতরা।
র্যাব ৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, শনিবার এ ঘটনার পর চকরিয়া থানায় মামলা
হয়। ডাকাতদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে। ছায়াতদন্তে ডাকাতদের চিহ্নিত করা হয়।
এই কর্মকর্তা বলেন, ২৯ নভেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজারে অভিযান চলাকালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ডাকাত সর্দার জয়নালকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি দেশীয় ওয়ান শুটার গান, এক রাউন্ড ৭.৬২ এমএম রাইফেলের বুলেট ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে বাকিদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তাদের দল গত ৫ ও ১২ নভেম্বর একই এলাকায় আরও দুটি বাসে ডাকাতি করে। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও সদর থানার বিভিন্ন এলাকায় রাতে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিলেন তারা।