নিম্ন পরিবারের মেয়ে জ্যোতি রানী ম-ল। পারিবারিক অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে একাধিকবার শিকার হয়েছিলেন ধর্ষণের। ভারতে পালিয়ে গিয়েও ফিরতে হয়েছিল বাড়িতে। আদালতে একটি ধর্ষণের মামলাও দেন বাবা। এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি জ্যোতির। ধর্ষকই জোরপূর্বক বিয়ে দেন। অবশেষে স্বামীর বাড়িতেই প্রাণ হারান মেয়েটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, পিটিয়ে হত্যার পর জ্যোতির লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। লাশের হাতের রগ কাটা ও বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাটবাঁধা ছিল। কিন্তু এসব ক্ষতের ছবি তুলতেও বাধা দিয়েছে পুলিশ।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মরদেহটি ময়নাতদন্ত শেষে ফেরেনি। মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।
শরীরে লাঠির আঘাত ও হাতের রগ কাটার ক্ষতের ছবি তুলতে পরিবারের সদস্যদের বাধা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, হ্যাঁ, হাতে ব্লেড দিয়ে কাটার দাগ ছিল। রক্তও পড়েছিল। সুরতহাল রিপোর্টে এসব লেখা আছে। তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেননি।
জ্যোতি রানী মণ্ডল (২০) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কাঠবুনিয়া গ্রামের সুকুমার মণ্ডলের মেয়ে। একই উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের আটঘোরা গ্রামের রাজীব দাশের স্ত্রী।
সুকুমার মণ্ডল বলেন, ৫-৬ মাস আগে প্রভাবশালী প্রতিবেশী তপন ঠাকুর জোর করে আমার মেয়েকে রাজীব দাশের সঙ্গে বিয়ে দেন। তার আগে আমার অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন তপন। এর পর আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেন। মামলাও করেছিলাম। কিন্তু আদালতে আমি একা যাই তপন যায় না। পরে ইউএনও অফিসে আমার পা ধরে মাফ চেয়েছিল। তাই মাফ করে দিয়েছিলাম।
সুকুমার মণ্ডল আরও বলেন, তপন আমার মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। উপায় না দেখে পরে মেয়েকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। সেখান থেকেও ফিরিয়ে এনেছিলাম আদালতে মামলা করার পর। এর পর তপন জোর করে রাজীব দাশের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয় জ্যোতিকে। এখন আমার মেয়েকে পিটিয়ে মেরে ফেলে লাশ ঘরে ঝুলিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আমাকে মোবাইলে জানায় জ্যোতি মারা গেছে। গিয়ে দেখি লাশ পড়ে আছে, গন্ধ বের হচ্ছে। মৃত্যুর পর ওখানেও তপনের দুই সহযোগীকে দেখেছি।
জ্যোতির চাচাতো ভাই পলাশ মণ্ডল জানান, তার বোনের হাতের রগ কাটা, বাম পায়ে হাঁটুর নিচে রক্তজমা, মুখের নিচে রক্তজমা, গলায় নখের আঁচড়ের দাগ দেখেছি। নিচে রক্ত পড়ে আছে। পুলিশকে এসব দেখালে কোনো কথা শোনেনি। ছবি তুলতেও বাধা দেয়। এ ছাড়া আমার চাচা-চাচি লেখাপড়া জানে না। পুলিশ তাদের কাছ থেকে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে।
এ ঘটনায় জ্যোতি রানীর স্বামী রাজীব দাশের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। তপন চক্রবর্তীর ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।