‘আমরা তো পাহাড়ে থাহি। আমগোর বাপ-মা অনেক কষ্ট করে সংসার চালাইতো। এহন বাপের অসুখ হওয়ায় বিছানায় পইড়ে গেছে। আমগোর এলাকার ১০ থেকে ১৫ জন পাহাড়ের গাছ-গাছালি থেইক্যা পিঁপড়ার ডিম পাইড়্যা (সংগ্রহ) বেইচ্যো টেহা (টাকা) কামাই করে। তাই আমিও তাদের দেহাদেহি পিঁপড়ার ডিম পাইড়্যা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টেহা কামাই করি। ওই টেহা দিয়াই সংসার চলে আমগোর।’ বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের বাসিন্দা টেমাল সাংমা (১৮)। শুধু টেমালই নন, পিঁপড়ার ডিম বিক্রির টাকায় তাদের সংসার চালিয়ে আসছেন অন্তত ২০ ব্যক্তি।
জানা গেছে, পিঁপড়ার ডিম বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের আধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পিঁপড়ার ডিম মাছের লোভনীয় খাবার। তাই মাছ শিকারিদের কাছে পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা অনেক। বর্তমানে এক কেজি পিঁপড়ার ডিম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডিম সংগ্রহকারী বিজয় সাংমা, মজিদ, নিরঞ্জনের ভাষ্য মতে, পাহাড়ে সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশীয় গাছগুলোতে ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা বাঁধে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পাড়ে। বড় বাসা থেকে একশ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষ দিকে- ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না।
বাকাকুড়া এলাকার পিঁপড়ার ডিম ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক জানান, বাকাকুড়া, রাংটিয়া, গজনী, নকশির কয়েক জনের কাছ থেকে পিঁপড়ার ডিম পাইকারি মূল্যে কিনে রাখেন তিনি। পরে মাছ শিকারি ও শেরপুরের বিভিন্ন দোকানেও পাইকারি বিক্রি করেন। অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এ ব্যবসা থেকেও আয় হয়ে থাকে। দিনে ৫ থেকে ১০ কেজি ডিম বিক্রি করতে পারেন বলে জানান তিনি।