সিলেটে জালালাবাদ গ্যাসে জনবল নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ অনিয়মে নাম ওঠেছে আল আরাফাত সার্ভিসেস (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবু তালেবের। আবু তালেব ফেনি জেলার পরশুরাম উপজেলার বাসিন্দা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা ও নাশকতা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০-৩৫টি মামলা চলমান রয়েছে।
এ অবস্থায় গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের দরপত্র বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল না করলে তারা আদালতের দারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন সিলেট জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অভিযোগ ওঠেছে, জালালাবাদ গ্যাসের শীর্ষ কর্তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিতর্কিত আল আরাফাত সার্ভিসেস (প্রা.) লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিষ্ঠানের
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ও নানা অভিযোগ থাকার পরও অন্যান্য শীর্ষ ও নামী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে অনিয়ম করে আরাফাতকে জনবল নিয়োগের দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২৫৪ জন লোক নিয়োগে একাধিক স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান থাকার পরও কীভাবে বিতর্কিত এ প্রতিষ্ঠান কাজ পায় এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অন্য ঠিকাদাররা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, ‘বাণিজ্য’ করতে এমন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার আগেই নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল আল আরাফাতের বিরুদ্ধে। একাধিক চাকরি প্রত্যাশীরও এমন অভিযোগ রয়েছে। আরাফাতের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করতেই গ্যাসের কিছু কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব প্রদান করেন। এ কারণে টেন্ডার বাতিল করে আবার প্রক্রিয়া শুরু করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হচ্ছেন একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক।
রান সিকিউরিটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল (অব) মিসবাহ আগের টেন্ডার বাতিল দাবি করে বলেন, গ্যাসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি অদক্ষ ও নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠানকে লোক নিয়োগের ইজারা দেওয়া হয়েছে। টেন্ডার অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই উচ্চ আদালতে রিট করব।
এদিকে বর্তমান রান সিকিউরিটি ছাড়াও এলিট ফোর্স লিমিটেড গালফসহ ১৩-১৪টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিলেও বাক্স খোলার সময় তাদের প্রতিনিধিদের সামনে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এ ব্যাপারে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুটি কমিটি ছিল। আমি ছিলাম মূল্যায়ন কমিটিতে। টেন্ডার ওপেনিং কমিটিতে অন্যরা ছিলেন। তিনি বলেন, দরপত্রের বাক্স খোলার তারিখের বিষয়টি আবেদনের কপিতেই আগে উল্লেখ করা থাকে। সে তারিখ অনুযায়ী সাধারণত অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত থাকেন।
এদিকে টেন্ডারে অংশ নেওয়া এলিট ফোর্স লিমিটেডের পরিচালক আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানসহ অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার প্রক্রিয়া ও কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষুব্ধ। তারা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন। তিনিও টেন্ডার বাতিলের দাবি করেন।
নিজের জানা মতে টেন্ডারে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লা। তিনি বলেন, আমার জানা মতে টেন্ডারে কোনো অনিয়ম হয়নি। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এক প্রশ্নের জবাবে- ওই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলা-মামলার আসামি এমন তথ্যও তার জানা নেই বলে মন্তব্য করেছেন।
গত ২৮ আগস্ট জালালাবাদ গ্যাসে ‘আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে। এতে ৯টি পদে ২৫৪ জন লোক নিয়োগ করার কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে কল সেন্টার অপারেটর পদে ৪ জন, গাড়ি চালক ৩১ জন, মোয়াজ্জিন ১ জন, সাহায্যকারী ১৬ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ১৫০ জন, এটেনডেন্স ২৭ জন, ডেসপাচার ২ জন, বেয়ারার ২ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ২১ জন রয়েছেন। টেন্ডারে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এলিট ফোর্স লিমিটেড, রান সিকিউরিটি, গালফ, যুমনা সার্ভিসেসহ প্রায় ১৩-১৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।