দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নারী-শিশুরা দুর্বৃত্তের অস্ত্রের মুখে, প্রতারণা বা ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। গণধর্ষণ সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী এমন একটি কাজ যা কোনো সুস্থ মানুষ অনুমোদন করে না। অথচ ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা এই মানুষ দ্বারাই ঘটছে।
গতকাল আমাদের সময় সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে চাকরির প্রলোভন দিয়ে কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ধর্ষণের শিকার এক প্রতিবন্ধী তরুণী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। ঢাকার ধামরাইয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে এক কাজি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া কবর জিয়ারতের কথা বলে মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনায় এক টমটমচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তথ্য দিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ১ হাজার ৮৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫০ জনকে এবং আত্মহত্যা করেছেন ধর্ষণের শিকার ২৯ জন, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদ- হওয়ার পরও দেশে নারী নির্যাতন, বিশেষত ধর্ষণ ও হত্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। অনেকেই মনে করছেন, বিচারহীনতা বা বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণ। নারীর প্রতি যেসব জঘন্য অপরাধ ও সহিংসতা ঘটছে, তা দ্রুত বিচার আদালতে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও নারী নির্যাতন রোধে নারী সংগঠন, নারীবাদীরা এমনকি সরকারও সোচ্চার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সমাজে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মাত্রা কমিয়ে আনতে এই ধরনের অপরাধের তদন্ত ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও বিচারব্যবস্থা আরও দ্রুত করা দরকার। শাস্তি কার্যকর করা খুবই প্রয়োজন। সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। যত ক্ষমতাবানই হোক, সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।