আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে শরীয়তপুরের বিভিন্ন পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। তবে কে পাচ্ছেন নৌকার টিকিট- এ নিয়ে সব এলাকায় চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এমন অনেকেও এবার দলীয় মনোনয়নের আশায় লবিং-গ্রুপিং শুরু করেছেন। পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড দিয়ে ছেয়ে ফেলেছেন নিজ নিজ এলাকা। মনোনয়ন লাভের জন্য স্থানীয় ও শীর্ষ নেতাদের কাছে চেষ্টা-তদবির করছেন তারা।
দলীয় সূত্র ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, ডামুড্যা ও জাজিরা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন গত নির্বাচনে মনোনয়নযুদ্ধে হেরে যাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা। গত নির্বাচনে নড়িয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগ নেতা, তৎকালীন মেয়র প্রয়াত হায়দার আলী। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম (বাবু রাড়ী) পরাজিত হন। এতে নড়িয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত হন বাবু রাড়ী। নির্বাচনে হায়দার আলী বিজয়ী হন। পরে হায়দার আলীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আবার দলীয় মনোনয়ন পান নড়িয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম (ভিপি চুন্নু)। তখন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ী বিজয়ী হন। পরে মেয়র বাবু রাড়ী নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে লবিং ও তদবির করে উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান। এ ছাড়া নড়িয়া পৌরসভায় উপনির্বাচনে প্রয়াত মেয়র হায়দার আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান (জুয়েল) বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তিনিও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ পেতে সক্ষম হন। ইতোমধ্যে শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ী ও মাহমুদুল হাসান জুয়েল স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার হাসানুজ্জামান খোকন।
অন্যদিকে ডামুড্যা পৌরসভায় গত নির্বাচনে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর বাচ্চু ছৈয়াল। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম (রাজা ছৈয়াল)। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রাজা ছৈয়াল। তবে এর আগের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল। বর্তমানে তিনি ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এ ছাড়া জাজিরা পৌরসভায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস ব্যাপারী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান মাদবর। নির্বাচনে ইউনুস ব্যাপারী বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। আর এবারও আনিসুর রহমান মাদবর দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে ভেদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে গতবারের আগের বার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আবদুল হাই মাস্টার। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন তৎকালীন যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান হাওলাদার। তবে গত নির্বাচনে দলীয় মানোনয়নে বিজয়ী হন আবদুল মান্নান হাওলাদার। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদও পেতে সক্ষম হন তিনি। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী, তাদের যেন কোনোভাবেই এবার দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া হয়। আর প্রথম দফায় ২৫ পৌরসভায় বিদ্রোহীদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা। শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন পৌরসভায়ও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে নড়িয়া পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ী বলেন, গত নির্বাচনে আমার কোনো দলীয় পদ ছিল না। তাই আমার কাছে ফরম বিক্রি করেনি। এ কারণে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি।
ডামুড্যা পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল বলেন, গত নির্বাচনে আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আশা করি এবার মনোনয়ন পাব, জয়ীও হব ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, মনোনয়ন সবাই চাইতে পারে। তবে আমাদের দাবি, বিদ্রোহীদের যেন কোনোভাবেই মনোনয়ন না দেওয়া হয়।