শাহীন রেজা
অন্ধকারের গল্প
কোটরজোড়া খুলে তোমাকে দিলাম
চোখ দুটো এখন কে নেবে, কে?
দৃষ্টিহীন বলেই জ্ঞানহীন মানুষগুলো
কা- হারায়-
আমি বর্ণ হারিয়ে গন্ধহীন নদীর করতলে
আঁকছি ঊর্মি-লিপি,
আহা ভাটায় ভেসে আসা মাগুর
কমজলে কেমন তড়পায়-
আমি তোমার আলোয় ডানামেলা
সি-গাল হতে চাই,
আমার ঈশ্বর জানে; অন্ধ আর
বোকা মানুষগুলো
কত সহজে ইঁদুর হয়ে যায়-
চলো আমরা ধানক্ষেতের গর্তে লুকাই।
সারওয়ার লতিফ
ভালোবাসা হারায় না
বিরহ কি বোঝ?
অগ্ন্যুৎপাত থেকে গড়িয়ে পড়া জ¦লন্ত লাভা
জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দেওয়া হৃদয়ের যন্ত্রণা
তুমি কি বোঝ?
পাত্রে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা জলের ফোঁটা
বাঁচার প্রচ- বাসনায় লাফিয়ে পড়ে জ্বলন্ত উনুনে-
এ যেন এক বিরহের শব্দমালা।
কেমন করে ভুলি তোমায় প্রিয়া
তুমি নাই এ যেন-
নাক মুখ বেঁধে উপুড় করে পানিতে ডুবিয়ে রাখা কোনো এক কয়েদি
নিঃশ^াস যায় তো যায় না- উহ্ কি নিদারুণ কষ্ট।
কতই না ভালোবাসি তোমায়।
হঠাৎ একদিন মরুভূমির ঝড়
ধূলিসাৎ করে দিল সব।
তোমার মণিকোঠায় ঘৃণার প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দিল আমায়
আর তুমি? তুমিই রয়ে গেলে।
ভালোবাসার মৃত্যু নেই, ভালোবাসা হারায় না
ভালোবেসেছিলাম, ভালোবাসি আর ভালোবাসব তোমায়।
ফকির ইলিয়াস
আদিম আর্সেনিক
শুধু মাটিই লিখতে পারে, মানুষের ভাগ্যবিবরণী
বৃক্ষই দেখিয়ে দিতে পারে, আদিম ভূত্বক। যেখানে-
পলি ছিল, পরিশ্রম ছিল, পরিণয় ছিল, ছিল মানবিক
বোধের সঞ্চার।
আর ছিল সবুজ সবজির মতো ভালোবাসা।
দূষণের দৌরাত্ম্য যেদিন বৃদ্ধি পেল এই গ্রামে-
সেদিন থেকেই পালিয়ে গেল রংবেরঙের পাখি
ভেঙে গেল পতঙ্গের সংসার; ভরাট নদীর পারে
দাঁড়িয়ে একদল মানুষ খুঁজল পিতামহের হারিয়ে
যাওয়া বাস্তুভিটে, আর বিগত প্লাবনের স্মৃতি!
পানিতে আর্সেনিক মিশলে পান করা কঠিন
হয়ে পড়ে। কিন্তু যে সমাজে ঢুকে পড়ে আদিম
হিংস্রতা, তা কি সরানো যায়!
আক্রান্ত আকাশ কাঁপে কর্কটের ছোবলে-
যাদের পাহারাদার হওয়ার কথা ছিল,
তারা ক্রমশ লুট করে পালায়!
মেজবাহ উদ্দিন
মানুষ ঠিকানা
কোনো দিন ফিরে আসবে না
মেঘরৌদ্র পাহাড়ের অচিনে
গুহার ভেতর হতে গুহায়
লুকিয়ে গেছে অনিমিশে।
হারালাম কোথায় কেউ জানে না
ওসব ঠিকানাও সুনিশ্চিত নয়
কারণ মেঘ হারায় রৌদ্র হারায়
পাহাড় হারায় গুহার ভেতরও
কোনো ঠিকানা পাওয়া যায় না।
কোনো দিন তারও ঠিকানা ছিল
শোভিত শস্যের বাগান ছিল
সে আজ কোথায় লুকাল জানি না।
জানি তার ঠিকানা ছিল মানুষ ঠিকানা
আজ আর জানি না।
নাগর হান্নান
বুকপকেটে তুমি
সিথানের বালিশটাকে বুকে ধরে ভাবি
কাল তোমার সাথে দেখা করব।
প্রভাতে আঙিনায় চোখ ফেলতেই
ঝরা ফুল আমাকে শাসায়
‘তোমাদের ভালোবাসার পরিমাণ কত?
সারে তিন হাত হবে তো?’
ঝরা ফুলের শাসানো দেখে-
তোমার জন্য রাখা ভালোবাসাটুকু
সাদা শার্ট পড়ে বুকপকেটে লুকিয়ে রাখি।
মাহফুজুর রহমান সৌরভ
অদৃশ্য মানবের আঙুলের ইশারা
সুখের ডানায় উড়ে সমুদ্রসম্ভাবী মন
দ্বিধাহীন ভাবনায় কেন্দ্রচ্যুত হই বারবার।
নিরাশার এই ক্ষণজন্মা ঘিরে রাখে
অচেনা অদৃশ্য মানবের আঙুলের ইশারা!
নিঃস্বতায় নিরাকার ভস্মহৃদয়;
হায় দেবদূত! পোড়ামাংসের শরীরও চেটে খায়
অন্ধশাসিত হিংসুটে মন-
মাতাল দুচোখ ফিরে নেয় এই প্রেক্ষাগৃহ থেকে
আহাজারির হৃৎপি- ছিঁড়ে খায়
এক অঘোর আয়োজনে।
ওড়াও বেদনার চুম্বন শেষে
হে নবজাত পৃথিবী তোমার...
অমিত দে
দেহগান
দেহ যে এক বৃক্ষ সে কথা প্রতিটি পাঁজর জানে;
এ যাবৎ অপার মাটির স্বাদ গ্রহণ করেছে
দ্বিধাহীন। এই তো পরম, জয়গান।
ধসে যাওয়া মাটির মতো কখনো তোমরা
ক্ষতচিহ্ন দিয়ে যাও, কোনো ভোরে নতুন সবুজে
যাবতীয় উত্তর গুছিয়ে রাখি।
খিদের বন্দনা করি, জড়তার জন্য পত্ররন্ধ্র।
অনুযোগে অন্তত একটি শুকনো পাতার
শিশিরে ফুরিয়ে যাই। এই প্রকৃত চলন
আমাকে পুরুষ্টু করে তোলে- শেকড় তো জানে
পেয়েছে যতটা মাটি তার বেশি পার ভাঙা জল...