আগে থেকেই জেনেশুনে দোহায় গিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। দোহায় আরব্য রজনী দেখার সাধ ছিল না কারও। বরং ছিল ‘মিশন ইম্পসিবল’। শক্তিমত্তা ও চরম বাস্তবতা আগেই বলেছে, ম্যাচটিতে বাংলাদেশ শুধু লড়াই করতে পারে। কাতারের প্রতিটি খেলোয়াড় ইতিবাচক ছিলেন। প্রত্যেক্যেই বেশ অভিজ্ঞ। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে শুধু গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো নজর কেড়েছেন। যদিও বিশ্বকাপ ২০২২ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বাংলাদেশ ৫-০ গোলে হেরেছে। বাংলাদেশে এসে কাতার জিতেছিল ২-০ ব্যবধানে। তবে ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। দোহায় গতকাল আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ তেমন লড়াই করতে পারেনি। কাতারের কাছে বল ছিল ম্যাচের ৭৩ শতাংশ সময়। আক্রমণে নির্বিষ, শারীরিকভাবে পিছিয়ে থাকা, ম্যানমার্কিংয়ে ব্যর্থ, প্রতিপক্ষ বল পাসিংয়ে যথেষ্ট ফাঁক পেয়েছে ও কৌশলের জন্য হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। করোনার এই মহামারীতে কোয়ারেন্টিন বাধা পেরিয়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরে ওই মরুর বুকে অন্তত একটি পয়েন্ট আশা করেছিলেন জামালরা।
কাতার ১৫টি অন টার্গেট শট নিয়েছে ম্যাচে। ১০টি অন্তত ব্যর্থ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। এই ম্যাচে এটাও পাওনা। প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধে কাতার সমান আগ্রাসী ছিল। আকরাম আফিফ ও আলমোয়েজ আলি অনেক সুযোগ পেয়েছেন ম্যাচে। অবশ্য এই দুজন সমান ২টি করে গোল করেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৭২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে কাতার গোল পেয়ে যায়। আলমোয়েজ স্কোর করেন।
৬ মিনিট পরে তিনিই আবার গোল করলে স্কোরলাইন হয় ৪-০। অতিরিক্ত সময়ে আফিফ ৫-০ করে ফেলেন ম্যাচের ফল। আনিসুর রহমান অনেক সেভ করায় স্কোরলাইন এখানেই থেমেছে। বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে করোনা জয় করে কাল ডাগ আউটে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ভারত ও আফগানিস্তানের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছেন।
বিশ্বকাপের শহরে খেলা। উঁচু উঁচু অট্টালিকার ফাঁকে দিনে সূর্য মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়েছে। তবে খেলাটি ছিল রাতে। ফলে উত্তাপ বোঝার উপায় নেই। যদিও শীত আসি আসি করছে বলেই হয়তো সে দাবদাহ বোঝা যায়নি। অবশ্য বাংলাদেশি ফুটবলাররা কাতারের শক্তিমত্তার উত্তাপ ভালোই টের পেয়েছে। ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ তো বটেই। আবার ফিফা র্যাংকিংয়ে তারা ৫৯। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪। তারপরও বাংলাদেশ লড়াই ও ড্রয়ের অথবা ১টি পয়েন্টে হিসাবে খেলতে নেমেছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে- স্পেন ও বার্সেলোনার কিংবদন্তি জাভি কাল মাঠে ছিলেন। তিনি কাতারের আল সাদ দলের কোচ। বাংলাদেশ-কাতার ম্যাচটি দেখেছেন।
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতার আক্রমণ করে খেলতে থাকে। ১৮০০ দর্শক মাঠে এসেছিলেন। বাংলাদেশি অনেকে মাঠে ছিলেন। যারা সেদেশে কর্মরত। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখতেই এসেছিলেন। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে কাতারের আহমেদ আলার চেষ্টা বারে লেগে ফিরে যায়। গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। আবদুল আজিজ হাতিম দারুণ গোল করেন। ৯ মিনিটে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো দারুণ সব সেভ করেছেন। ১১ মিনিটে আলার হেড গোল হতে পারত। দারুণ সেভ করেন জিকো। বাংলাদেশ রক্ষণাত্মক খেলেছে। লোন স্ট্রাইকার ছিলেন শুধু মাহবুবুর রহমান সুফিল। তবে মাঠে বাংলাদেশ দল শারীরিক ও কৌশলে পেরে উঠছিল না। ম্যান মার্কিংয়েও বিবশ ছিলেন জামালরা। কাতারের বল রিসিভে কোনো সমস্যা হয়নি। মাঠের দৈর্ঘ্যও বড় ছিল। ফলে লড়াইটা সহজ ছিল না। বাংলাদেশ আক্রমণে যেতেই পারছিল না। ২৯ মিনিটে তারা প্রথম কর্নার পায়। ৩৩ মিনিটে কাতারের আকরাম আফিফ বক্সের বাঁ-দিক থেকে ভেতর-বাইর করতে করতে বলে হিট নেন। কাতার ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ সেভাবে আক্রমণ করতে পারেনি। আর অ্যাটাকে গেলেও বল রাখতে পারেনি।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ৫ ম্যাচের ৪টিতে হেরেছে। ভারতের সাথে খালি তাদের ১-১ গোলে ড্র। গ্রুপ ‘ই’তে কাতার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। চীনে ২০২৩ সালে এশিয়ান কাপ। সেই আসরে খেলা তাদের নিশ্চিত। ২০২২ বিশ্বকাপে তো তারা স্বাগতিকই। কাতার ৬ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে।