বিরুদ্ধমতকে দমন করতে লাগাতার নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আসছে চীন। এর সর্বশেষ শিকার হলেন দেশটির জিনজিয়ান প্রদেশের উইঘুর মুসলিম অধিকারকর্মী এবং চিকিৎসক ডা. গুলশান আব্বাস। তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে চীন সরকার।
তার বোন রুশান আব্বাস চীন এবং এর বন্দী শিবিরের বিষয়ে সভায় আলোচনা করার পর ২০১৮ সালে আব্বাস নিখোঁজ হন। ২৭ মাস ধরে তার অবস্থান অজানা থাকার পর গত ২৫ ডিসেম্বর তার পরিবার জানতে পারে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে চীন সরকার আব্বাসকে কারাদণ্ড প্রদান করেছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলশান আব্বাসের বিষয়টি জনসম্মুখে আসার পর বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে চীন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস কাউন্সিল অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের (ইউএসসিআইআরএফ) কমিশনার নুরি টার্কেল। গুলশান আব্বাসের মুক্তির দাবিতে তিনি প্রত্যেককে নিজ নিজ অঞ্চলের চীনা রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লেখার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি তাতেও কাজ না হয়, তবে তিনি সবাইকে ড. গুলশান আব্বাসের তাত্ক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে বলেছেন।
একই দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল স্টেট ফর ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার। সংস্থাটির সহকারী সচিব রবার্ট এ ডাস্ট্রো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দমন নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় কর্মীদের নির্মম শিকার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
চীন সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল অ্যাক্সিকিউটিভ কমিশন কমিটি (সিইসিসি) গত ৩০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সিইসিসির চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংসদ জিম ম্যাকগোভার্ন, টম সুজজি, ক্রিস স্মিথসহ অনেক বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী অংশ নেন।
এসময় জিম ম্যাকগোভার্ন নিরীহ ও অসহায় মানুষকে কারাবন্দী ও শাস্তি দেওয়ায় চীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। চীন সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় উইঘুরদের ওপর জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ আইন পাসের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে।
উইঘুরদের ওপর চীনের নির্মম নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টম সোজজি। রাষ্ট্রদূত কেলি বলেন, এই জাতীয় স্তরের মানবাধিকার অপরাধকে সর্বসম্মতভাবে প্রতিহত করা দরকার। যেখানে মার্কিন কংগ্রেস এবং প্রশাসন যৌথভাবে এই বিষয়টিকে অনুসরণ করে আব্বাসের প্রাথমিক ও নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছে।
নির্বাসিত কর্মীদের স্বজনদের ওপরও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে চীন সরকার। ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেসের মতে, চীন উইঘুরদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অমানবিক নীতি গ্রহণ করেছে। চীন কেবলমাত্র উইঘুরদের শ্রম শিবিরে কাজ করার জন্য বাধ্যই করেনা এর পাশাপাশি সেখানে উইঘুর ভাষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উইঘুর পরিবারগুলোকে পৃথক করে রাখা হয়েছে এবং সংস্কৃতি পরিচয়কে সম্পূর্ণরূপে ধুলিস্মাৎ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া উইঘুর নারীদের জোর করে বন্ধা করা হচ্ছে।