অবশেষে করোনার টিকা পাওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছবে। টিকা আমদানির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এই সময়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা আমদানি করবে। প্রথম চালানের মাধ্যমে যে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে, এর দুই ডোজ একজন টিকাগ্রহণকারীকে দুই মাসের ব্যবধানে দেওয়া যাবে। এর মধ্যে নতুন চালান এসে যাবে। তাই ২৫ লাখের পরিবর্তে ৫০ লাখ মানুষকেই এ টিকা দেওয়া যাবে। এই ৫০ লাখের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। টিকা প্রদানের স্থান, পদ্ধতি এবং এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রক্রিয়া আশা করি এরই মধ্যে ঠিক করা হবে। কোনো অবস্থাতেই এ কাজে বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে।
আমাদের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি বলা হচ্ছে। ফলে ৫০ লাখ টিকা চাহিদার অত্যন্ত সামান্য একটি অংশ মাত্র। নবজাতক, প্রসূতি, গর্ভকালীন জটিলতায় ভোগা নারী প্রমুখকে বাদ দিলেও ১২ কোটি থেকে ১৪ কোটি মানুষের জন্যই তো টিকার প্রয়োজন। ওই হিসাবে করোনার প্রতিষেধক টিকার অন্তত ২৪ কোটি থেকে ২৮ কোটি ডোজ প্রয়োজন। এটি যেমন জোগাড় করা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ, তেমনি দেওয়াও সময় এবং কষ্টসাধ্য কাজ। কত অর্থে কত দিনে এ কাজ শেষ হবে, তা বলা মুশকিল। প্রত্যেককে দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। এসব হিসাব ঠিকমতো বুঝে টিকার কার্যকারিতা নিশ্চিত করাও বেশ বড়মাপের কাজ। এর প্রস্তুতিও সেভাবে লাগবে।
টিকার ব্যয় কতটা সরকার বহন করবে, কতটা গ্রহীতাকে দিতে হবে- তাও পরিষ্কার জানানো দরকার। আমরা এও জানি, আমাদের দেশে সাধারণভাবে মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী নয়, ভয় পায়। আবার এই টিকাগ্রহীতাকে এমন একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর দিতে হবে- যাতে এর পূর্বাপর সব দায় তাকেই নিতে হবে। এতেও টিকা নিয়ে মানুষের দোলাচল ও ভয় বাড়বে। ফলে আমাদের মনে হয়- করোনার টিকা নিতে মানুষের সব ভয়, সংস্কার ও অন্যান্য বাধা কাটানোর জন্য এখন থেকেই গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো দরকার। দীর্ঘদিন প্রচারের ফলেই ইপিআই কার্যক্রম সফল হওয়ায় দেশে নবজাতক, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এই সাফল্য দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। আবার যক্ষ্মা বা অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে টিকাগ্রহণসহ স্বাস্থ্য সচেতনায় যথেষ্ট ঘাটতি ও ঔদাসীন্য দেখা যায়। ফলে আমাদের মনে হয়, করোনার টিকাদান কার্যক্রমটিকে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবেই গ্রহণ করা উচিত। অন্যান্য দেশের মতো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ দেশ এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে টিকা গ্রহণের কর্মসূচি থাকা উচিত। এতে গণমানুষের ভয় কাটবে, শঙ্কা দূর ও কাজ সম্পন্ন করা সহজতর হবে।