সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার অধীন নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় বৃদ্ধি একটি সাধারণ প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। প্রথমে নির্ধারিত সময় ও প্রথম-প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিরল কিংবা নেই বললেই চলে।
বর্তমানে রাজধানীর ব্যস্ত রাজপথের ইন্টারসেকশনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি স্থাপনে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) নামে একটি প্রকল্প চলমান। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এ প্রকল্পের কাজ অনেকটা গুছিয়ে আনার পর নিয়ন্ত্রক যন্ত্রটি (সার্ভার কম্পিউটার) স্থাপনের প্রস্তুতিকালে জানা গেছে, গোডাউন থেকে এটি চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি জানায়, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জাপানি প্রকৌশলীদের অবহেলায় এমন কা- হয়েছে। এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে আইটিএস সরঞ্জামাদি। এগুলোও চুরি হওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুমে দ্রুত স্থাপনের জন্য সফটওয়্যার সংবলিত সার্ভার কম্পিউটার কিনতে প্রকল্পের বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে ডিটিসিএ। ডিটিসিএর সিগন্যাল বাতির জন্য শুরুতে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি টাকা। দুই দফায় বাড়িয়ে তা এখন ৫২ কোটি ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। কয়েক দফা বাড়িয়ে কাজ শেষ করার মেয়াদ নেওয়া হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সব কাজের পরিকল্পনা করা হয় জনগণের স্বার্থে কিংবা অন্তত কাগজ-কলমে জনস্বার্থের কথা বলে। যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তাও জনগণেরই। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও ওই ঋণের বোঝা এ দেশের জনগণকেই টানতে হয়। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ানোর ফলে জনগণ শুধু সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, তার কষ্টার্জিত করের টাকারও অপচয় হচ্ছে। অথচ যে কোনো প্রকল্পে, সেটি ছোট হোক বা বড়, অনিয়ম-দুর্নীতি হবেই- এটি যেন অমোঘ সত্যে পরিণত হয়েছে। সব সংস্থা-প্রতিষ্ঠানেরই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা একটি স্থায়ী চর্চায় পরিণত হয়েছে জবাবদিহির অভাবে। সবকিছুর আগে এই জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।