মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে দাঙ্গা-হামলায় উসকানির দায়ে দ্বিতীবারের মতো অভিশংসিত হতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল রাতে (বাংলাদেশ সময়) এ প্রতিবেদন লেখার সময় ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে প্রথমবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের মুখে পড়লেন তিনি, যা মার্কিন ইতিহাসে প্রথম। যদিও ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হলে উচ্চকক্ষ বা সিনেটে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে হবে। খবর বিবিসি, রয়টার্স।
বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে দিনের শুরুতেই ডেমোক্র্যাট নেতারা অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করেন। অধিবেশনের শুরুতে আইনপ্রণেতারা বিতর্কে অংশ নেন। কয়েক ঘণ্টা বিতর্কের পর সদস্যদের আনুষ্ঠানিক ভোটে অংশ নেওয়ার কথা। বিবিসি জানিয়েছে, ভোটের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর সময় বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা।
ডেমোক্র্যাট সদস্যরা যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
দেখিয়েছেন এবং ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন তাতে ধারণা করা হচ্ছে, নিম্নকক্ষে অভিশংসনের পক্ষে বেশি ভোট পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ট্রাম্পের জন্য পরিস্থিতি আরও নাজুক। নিজ দল রিপাবলিকান কয়েকজন শীর্ষ নেতাও প্রস্তাবের পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দলটির তৃতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব লিজ চেনি। এ ছাড়া রিপাবলিকান সিনেটর প্যাট টুমি ট্রাম্পের পদত্যাগ দাবি করেছেন। বলেছেন, ‘আমার মনে হয় দেশের জন্য এখন সবচেয়ে ভালো হবে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প পদত্যাগ করে দ্রুত বিদায় নেন। আমি জানি, তা হয়তো হবে না। তবে এটা হলেই ভালো হতো।’ আর চেনি বলেছেন, ‘পার্লামেন্ট ভবনে হামলার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ট্রাম্পের অভিসংশনের পক্ষে ভোট দেব।’ আরেক রিপাবলিকান সদস্য পিটার মেইজার বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প ক্ষমতা পরিচালনা করার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
অভিশংসনের প্রস্তাবের আগে গত মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানান। ওই সংশোধনীতে বলা আছে, প্রেসিডেন্ট যদি শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে ‘অপারগ’ হন, তা হলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। কিন্তু পেন্স সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। পেলোসিকে লেখা এক চিঠিতে পেন্স বলেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদ আর মাত্র আট দিন বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের জাতির স্বার্থ সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষা করবে বা এটি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি না।
পেন্সের পক্ষ থেকে ২৫তম সংশোধনী প্রস্তাব নাকচের পর ডেমোক্র্যাট নেতাদের সামনে ট্রাম্পকে পদচ্যুত করার অভিশংসন ছাড়া আর কোনো পথ উন্মুক্ত ছিল না। এ পরিস্থিতিতে গতকাল অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও সিনেটে প্রস্তাব পাস নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে। কেননা উচ্চকক্ষ বা সিনেটে এখনো রিপাবলিকানদের প্রভাব বেশি। আর অভিশংসনের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সমর্থন প্রয়োজন হবে, যা এখনো দৃশ্যমান নয়।
গতকাল প্রতিনিধি পরিষদে বিশেষ অধিবেশন নিয়ে কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভোরে ভবনের মেঝেতে শুয়ে আছেন, কেউ বা একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস অধিবেশনে জো বাইডেনকে জয়ী হিসেবে ঘোষণার আনুষ্ঠানিক পর্ব। অধিবেশন চলাকালে উগ্র ট্রাম্প সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকে হামলা চালান। এ ঘটনা ২০০ বছরের মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে আর নেই। ওই তা-বে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।