পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত হয়ে ফিরলেও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহামুদ হাসান বিপুকে। যশোর হাসপাতালে ভর্তির পর গতকাল বুধবার বিকালে তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করার কথা। বিপুর অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। তিন দফা তাকে পেটানো হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী
লীগ নেতারা। অবশ্য পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, পুলিশ হেফাজতে ওই নেতাকে মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে। এ সময় মাহমুদ হাসান বিপুসহ অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। সোমবার রাতভর আটকে রাখার পর আন্দোলন-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ বিপুকে মুক্তি দেয়।
এসএম মাহমুদ হাসান বিপু জানান, সোমবার শহীদ মিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে মাহমুদ হাসান বিপু এগিয়ে যান। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারপিটে জড়িত নন। কিন্তু পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়। বিপু অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে পুলিশ লাইন্সে আটকে রেখে রাতভর বেধড়ক মারপিট করেছে। তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার সারা শরীরে কালশিটে পড়ে গেছে। দুই পা ফেটে গেছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী এই নির্যাতন চালিয়েছেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, মাহমুদ হাসান বিপুর সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। তার প্রেসার, ডায়াবেটিস রয়েছে। রক্তে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে এসেছে। চার সদস্যের মেডিক্যাল টিম তাকে পরীক্ষা করেছে। মেডিক্যাল টিম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে।
এ দিকে, মাহমুদ হাসান বিপুকে আটকের রাতেই পুলিশ শাহীন চাকলাদার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর ও তা-ব চালিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন। তারা জানান, সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আব্দুল খালেক, তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবলীগের সদস্য মনজুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে হামলা চালায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক টিম গভীর রাতে তার বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শাহীন চাকলাদার এমপির প্রেসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালায়, যা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।
যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, মুক্তির আগ পর্যন্ত মাহমুদ হাসান বিপুকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেনি। এখন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।