শেরপুরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পরিবারের সদস্যরাই ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামকে কুপিয়ে খুন করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত নিহতের পাঁচ স্বজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ক্লু-লেস এই হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন এবং জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলো বগুড়া জেলা পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তারা হলেন নিহতের চাচা আবদুর রাজ্জাক, ছোট ভাই জিয়াউর রহমান জিয়া, ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ, ভাবি শাপলা খাতুন ও শ্যালক ওমর ফারুক।
গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় শেরপুর উপজেলার ইটালী মধ্যপাড়ার নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন করা হয় রড ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামকে। স্থানীয় ছোনকা বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হত্যাকা-ের পরদিন নিহতের স্ত্রী ইসমত আরা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে শেরপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা জানান, হত্যাকা-ের পর পুলিশ কোনো ক্লু পাচ্ছিল
না। এরই মাঝে গত ৮ জানুয়ারি পুলিশের কাছে একটি অপহরণের তথ্য আসে। নিহত ফরিদুলের শ্যালক ওমর ফারুককে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার স্ত্রীর কাছে ফোন আসে। পুলিশ ওমর ফারুককে মানিকগঞ্জ থেকে উদ্ধারের পর জানতে পারে তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে অপহরণ নাটক সাজিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওমর ফারুক তার ভগ্নিপতি ফরিদুল খুনের বিষয়টি পুলিশকে জানান। ওমর ফারুক পুলিশকে আরও জানান, ভগ্নিপতিকে খুনের পর তিনি মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন। অপহরণ নাটক সাজিয়ে তিনি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। ওমর ফারুকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী পুলিশ অন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ফরিদুল তার মায়ের সম্পত্তি থেকে ভাইবোনদের বঞ্চিত করেন। মায়ের মৃত্যুর দুই বছর পর তিনি একটি দলিল বের করে দাবি করেন, মায়ের সব সম্পত্তি তাকে লিখে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পুরো পরিবারের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ৩ লাখ টাকায় জমি বন্ধক নেওয়াকে কেন্দ্র করে শ্যালক ওমর ফারুকের সঙ্গে ফরিদুলের বিরোধ দেখা দেয়। এ কারণে তারা ফরিদুলকে খুনের পরিকল্পনা করেন। গত ২৮ ডিসেম্বর স্ত্রী-সন্তান ঢাকায় যাওয়ায় ফরিদুল বাড়িতে একাই ছিলেন। এই সুযোগ কাজে লাগায় তারা। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ ছোরা নিয়ে ফরিদুলের বাড়িতে ঢোকেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরিদুল বাড়িতে প্রবেশ করলে ফারুক তার মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় ফরিদুলের চাচা, ভাই ও ভাবি সেখানে গিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তারাই পুলিশকে খুনের সংবাদ দেন। পরে ফরিদুলের লাশ উদ্ধার এবং দাফনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, (অপরাধ) আবদুর রশিদ, (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, শেরপুর সার্কেল গাজীউর রহমান, মিডিয়া ও সদর সার্কেল ফয়সাল মাহমুদ, শেরপুর থানার ওসি শহীদুল ইসলাম, সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর ও ডিবির ওসি আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।