ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের কর্মচারীর মেয়েকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই হলের কর্মকর্তার ছেলের বিরুদ্ধে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সেটি জানানো হলে তিন সপ্তাহেও তার বিচার করা হয়নি। এমনকি এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও তা নেয়নি শাহবাগ থানা। অভিযুক্ত সুমন আহমেদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তার বাবা আবুল কাসেম ওই হলের টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
ভুক্তভোগী ভাই বলেন, ‘আবাসিক কোয়ার্টারের বখাটে সুমন দীর্ঘদিন ধরেই আমার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। কিন্তু তাতে কোনো ধরনের সাড়া না দেওয়ায় তাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে আমার বোনকে সুমন ও তার বোন কহিনূর মারধর করে। এতে প্ররোচিত করেন কহিনুরের স্বামী বশীর খান।’
পরিবারের অভিযোগ, মারধরে তাদের মেয়ে মারাত্মকভাবে জখম হয়ে জ্ঞান হারায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান অভিযুক্তের
পরিবার থেকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে ঢামেক থেকে মিরপুরের ডেল্টা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার শরীরে মারাত্মক ক্ষত হয়েছে বলে জানান।
ভুক্তভোগীর ভাই আরও বলেন, তারা এ বিষয়ে হল প্রশাসনকে অভিযোগ দিলে প্রক্টর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু সেটি আনঅফিসিয়ালি হওয়ায় পরবর্তীতে আবারও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যদিও সেই কমিটির মেয়াদ তিন সপ্তাহ পার হলেও তারা এ ঘটনার কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। পরে আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীকে বিচার দিলে তিনি হল প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দেন। জানান, হলের প্রভোস্ট এর বিচার করবেন।
এ ঘটনার দুদিন পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করতে যান ভুক্তভোগীর পরিবার। কিন্তু থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও মামলা নেননি; বরং মামলা না করতে উৎসাহিত করে তারা বলেন- এটা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয় তাই তারাই এর বিচার করবে। মামলা করার প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, ‘আগে তাদের একটি অভিযোগ দিতে হবে। তার প্রেক্ষিতে একজন তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার খোঁজখবর নিয়ে এটা কতটুকু সত্য তারপর মামলা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সুমন আহমেদ বলেন, ‘আমরা পাশাপাশি বাস করি। ওই পরিবারের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। আমরা ভাই-বোনের মতো ছিলাম। কিন্তু ওই মেয়ের সঙ্গে আমার বোনের ঝামেলা হয়। সে আমার বোনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে দেয়। তবে আমি তাকে মারধর করিনি। হাসপাতালে গিয়ে হুমকিও দেইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তিন-চার মাস আগে বিয়ে করেছি। তাই উত্ত্যক্ত করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’
অভিযোগের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই সিরিয়াস। ঘটনার পরদিনই একটি তদন্ত কমিটি করেছিলাম। তারা আজ বা কালকের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। দোষীদের অবশ্যই শাস্তি দিব।’