তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে ছোট সে কাজল গাঁয়-
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে
তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।
পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতার বুনো পাখিদের সঙ্গে ভাব করতে আর গ্রামে যাবার দরকার নেই। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতেই রয়েছে শালিক পাখির কাকলিতে মুখর একখ- বুনো পরিবেশ। এ যেন গানের পাখি শালিকের বাড়ি। এখানে ইট-পাথরের নগরীতে বুনো পাখিদের সঙ্গে মানুষের বসবাস।
এমনিতেই বাঙালির বিশ^াসে শালিক পাখি শুভ পরিচয় বহন করে। যাত্রাকালে জোড়া শালিক দেখা মানে ভাগ্য সুপ্রসন্ন। প্রবাদ, জ্যোতিষশাস্ত্র বা ভাগ্য গণনাকারীদের কথা বাদই দিলাম। স্বভাবগতভাবেই শালিক সামাজিক পাখি। দল বেঁধে বাস করে। দল বেঁধে খাবার খোঁজে। পাখির কলকাকলি বলতে অন্য কোন পাখি নয় এক ঝাঁক শালিকের কিচিরমিচিরই বুঝায়। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের কাছাকাছি পাখি পরিবারে শালিক বেশ এগিয়ে থাকবে সন্দেহ নেই।
জোড়া শালিক মানেই লক্ষণ শুভ। আর যারা পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভেঙেই দেখে শত শত জোড়ায় জোড়ায় শালিক পাখি! তারাতো পরম সৌভাগ্যবান। টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকায় রয়েছে এমনই এক টুকরো বুনো ঝোপঝাড়। ঝোঁপঝাড় বলতে একটা বাঁশের ঝাড়, কয়েকটি আম গাছ। আর দুটি ডোবায় দাঁড়িয়ে আছে গোটা কয়েক হিজল-তমাল। ডোবার ধারে নারকেল গাছের সারি। কলেজ রোডে আলকাছ কমিশনারের বাড়ি বললে এক নামে সবাই চেনে। এক খ- ঝোঁপের চারদিকেই কাউন্সিলরের পাঁচ ভাইয়ের ছয় বা আটতলা ভবন। তবে এ বাড়ির নাম শালিক বাড়ি বললে বেশ মানাবে। ঝোপে নির্বিঘেœ বসবাস করছে হাজারও শালিক। রয়েছে ঘুঘু, কানি বক এবং অন্যান্য পাখিও। ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো।’ ছাড়াকার মদনমোহন তর্কালঙ্কার হয়তো এমনি কোনো কলকাকলিমুখর পরিবেশে লিখেছেন।
খুব ভোরে আলো ফোটার আগেই শুরু হয় পাখির কলকাকলি। শালিকের কিচিরমিচির। শত শত শালিক, হতে পারে হাজার! এখানে অসংখ্য কানি বকও বাস করে। জোড়ায় জোড়ায় ঘুঘু, বুলবুলি আর কানাকোকাও দেখা যায় মাঝে মাঝে। তবে শালিকেরই রাজত্ব। ভোরে যখন কল্কল্ করতে করতে শালিকের ঘুম ভাঙে। শালিকের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে আশপাশের মানুষের। নগর জীবনেও পাখির সঙ্গে বেশ আছেন আশপাশের বাসিন্দারা। বিকাল হলেই অনেক বাসিন্দা ভবনের ছাদ থেকে পাখির নাচন দেখে মোহিত হয়। শালিক পাখির সেকি মন মাতানো কলকাকলি। নীড়ে ফেরার সময় হলে প্রথমে ঝাঁক বেঁধে এসে আশপাশের ভবনের ছাদে একটু জিরোয়। ছাদের রেলিং, নির্মাণাধীন কলামের রডের মাথা, চিলেকোঠার ছাদে পাখি আর পাখি। শালিক পাখি। ছাদ বাগানের ছোট ছোট গাছগুলো দেখলে মনে হয় পাখি ফল ধরেছে। সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। কানি বক কিন্তু লম্বা উড়ানে সোজা বাঁশ বাগানের মাথায় এসে বসে। দুপুরের সোনা রোদে ছাদ বাগানে ঘুরাঘুরি করে জোড়ায় জোড়ায় ঘুঘু।
জেনে নেয়া যাক শালিক পাখির পরিচয় : স্টার্নিডি পরিবারের সদস্য শালিক পাখি। কয়েক ধরনের শালিক রয়েছে। এখানকার শালিকগুলো সাদা-কালো। অর্থাৎ এগুলোর ডাক নাম হচ্ছে গো-শালিক বা গোবরে শালিক। এদের ঠোঁটের রঙ গাঢ় কমলা-হলুদ এবং চোখের মণি হালকা হলুদ রঙের। গো-শালিক ছাড়া শালিকের আরও কয়েক প্রজাতি হচ্ছে ঝুট শালিক, ভাত শালিক, গাঙশালিক ও বামন শালিক। ময়না শালিক পরিবারেরই সদস্য।