বিজয়ের ৪৯ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামালের পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। কবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলবে, তারও নেই নিশ্চয়তা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগীবাজারের জামাল। প্রতিবছর বিজয়ের মাসে পরিবার ছাড়া অন্য কেউ তার স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে যান না।
১৯৭১ সালের ১৩ জুলাই রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা জামালকে খুঁজতে বৈরাগীবাজারের সড়কভাংনির খশির গ্রামে অভিযান চালায়। প্রাণে বাঁচতে তিনি নানাশ্বশুরের বাড়ি বৈরাগীবাজারের জয়নগর উছাবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ১৪ জুলাই ভোরে মা ও স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। খাসা দীঘিরপাড় এলাকায় যাওয়ার পর স্থানীয় রাজাকার ফুরকান মাস্টার এক চৌকিদারের সহযোগিতায় তাকে আটক করে খাসা মসজিদে আটকে রাখেন। সেখান থেকে খাসা দীঘিরপাড়ে রাজাকার আবদুল খালিকের বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। জামালকে আটকের খবর শুনে তার মা সেখানে ছুটে যান। জামালকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালান রাজাকার ফুরকান মাস্টার। এ দৃশ্য দেখে তার দুই পা জড়িয়ে ধরে ছেলের প্রাণভিক্ষা চান মা। ফুরকান মাস্টার তাকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। অনেক অনুরোধ করেও ছেলেকে ছাড়াতে পারেননি মা। পরে ফুরকান মাস্টার অন্য রাজাকারদের সহযোগিতায় জামাল ও ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের মনোহর আলীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেন। সেখানে রাতভর নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। ১৫ জুলাই জামালকে বিয়ানীবাজার থানার পেছনে কাঁঠালতলায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জীবদ্দশায় ছেলের শহীদ হওয়ার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি জামালের মা আয়েশা বেগম ও স্ত্রী নেহারুন নেছা। স্থানীয়ভাবে শহীদ জামাল স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ জামাল স্মৃতি সংসদ গড়ে উঠলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনসহ সব জায়গায় শহীদ পিতার স্বীকৃতি পেতে আবেদন করলেও সাড়া পাননি জামালের একমাত্র কন্যা স্বাধীন সুন্দরী। ব্যক্তিগত জীবনে দুই কন্যাসন্তানের জননী স্বাধীন সুন্দরীর একটাই কামনা- মরার আগে শহীদ পিতার স্বীকৃতি পেতে চাই।
একই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্তার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের গুলিতে জামাল শহীদ হয়েছে। স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কোনো কারণবশত জীবিত কিংবা মৃত অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের মধ্যে শহীদ জামালও রয়েছেন। তবে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা পাবে। সরকারের নতুন সার্কুলার পাওয়া মাত্রই আমরা বিয়ানীবাজারের যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন কিংবা যারা জীবিত আছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা নির্দেশনা পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।