বার্ড ফ্লু রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি ও অন্য কোনো গৃহপালিত পাখি যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে আগাম সতর্কতা নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রতিবেশী দেশ থেকে হাঁস-মুরগি এবং ডিম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ কিংবা আগামীকালের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান আমাদের সময়কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এর আগে তিন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বার্ড ফ্লু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তাই বাংলাদেশেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে এ রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যাতে হাঁস-মুরগি এবং পাখিজাতীয় কোনো প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে অনুরোধ জানায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সংক্রমণ রোধে হাঁস-মুরগি ও পাখিজাতীয় প্রাণী এবং ডিম আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ সোমবার কিংবা আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে ডিজিস হলে সবসময়ই মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বার্ড ফ্লু রোধেও নেওয়া হয়েছে আগাম সতর্কতা। যদিও ভারতের অনেক দূরের রাজ্যগুলোয় এ রোগের প্রাদুর্ভাব। তার পরও জেনেটিক ডিজিস এবং ট্রান্সবাউন্ডারিÑ এগুলো যাতে বাংলাদেশে না আসতে পারে, সে জন্য কোনো হাঁস-মুরগি বা মুরগির বাচ্চাজাতীয় পাখিগুলো যাতে আমদানি করা না হয় সে জন্য বলেছি। এটা একেবারেই প্রাথমিক ব্যবস্থা, কারণ বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশা করি, এটা ঘটবেও না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠিতে সীমান্তবর্তী এলাকার কথা বলেছি, কোনো দেশের নাম বলিনি। যেই দেশে দেখা গেছে সেটা বলছি, কিন্তু সীমান্তবর্তী কথাটাই উল্লেখ করেছি। কারণ আমাদের ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের সঙ্গেও বাউন্ডারি আছে। সুতরাং এক দেশে হলে অন্য দেশে ব্যবস্থা না নিলে সেখানেও যেতে পারে। আমরা তাই শুধু পার্শ্ববর্তী দেশের কথাটি উল্লেখ করেছি।’
মন্ত্রণালয় এর আগে ১২ জানুয়ারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাসহ অন্যান্য জেলায় প্রতিদিন বার্ড ফ্লু রোগের অনুসন্ধান এবং সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি-বেসরকারি খামারে নিবিড় তত্ত্বাবধানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো মৃত বা সন্দেহজনক হাঁস-মুরগি বা পাখি পাওয়া গেলে নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত নিকটবর্তী ল্যাব থেকে পরীক্ষা করে ফল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে। জেলা ও উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল ও গবেষণাগারে পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষার কিট ও পিপিই জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ, খামারে জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষক ও খামারিদের সতর্ককরণে ব্যাপক প্রচার চালানো, বার্ড ফ্লু প্রতিরোধকল্পে এর টিকার বর্তমান মজুদ যাচাই করে দ্রুততার সঙ্গে টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণেও নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। একই চিঠিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালুকরণ এবং সারাদেশ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তা মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।