কিছু দিন আগেই আইসিসির দশকসেরা ওয়ানডে একাদশে জায়গা পান সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জন্য এটা বড় প্রাপ্তি; বাংলাদেশের জন্য গর্বের। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন ছন্দ হারিয়েছিল। বলতে পারেন কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিল! অথচ দেখুন ক্রিকেটবিধাতার কী দারুণ পরিকল্পনা! করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে তো ক্রিকেটই থমকে গিয়েছিল। মার্চের পর থেকে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই খেলা হয়নি টাইগারদের। সাকিব জাতীয় দলের হয়ে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন সেপ্টেম্বরে। এর পরই তার ওপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসে। সাকিববিহীন বাংলাদেশ ছিল অনেকটাই পালবিহীন নৌকার মতো! ২০২০ সালের শেষ দিকে বিসিবি আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পাঁচ দলের ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। তিনি জেমকন খুলনার হয়ে খেলেন। তবে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে তার ফেরাটা ভালো হয়নি। ব্যাটে-বলে মলিন ছিলেন সাকিব। অথচ দেখুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেই সাকিবই বল হাতে কতটা উজ্জ্বল! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজার রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই যেন হয়েছে। তার ফেরার ম্যাচে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে দীর্ঘ ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। এ সিরিজের জন্য ২৪ সদস্যের প্রাথমিক দলে ডাক পান সাকিব। এর পর বিসিবি যে ১৮ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে সেখানে অনুমিতভাবে রাখা হয় তাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ দল করোনাপরবর্তী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে। সাকিবেরও প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ এটি। আর সে ম্যাচে বল হাতে রঙিন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার স্পিন বিষে নীল করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার ব্যাটসম্যান ম্যাকার্থি, জেসন মোহাম্মদ, বোনার, জোসেফকে। সাকিবের বোলিং ফিগারটা ছিল ৭.২-২-৮-৪। অর্থাৎ ১.০৯ ইকোনমিতে ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ম্যাচে সব আলো যেন একাই কেড়ে নেন অভিজ্ঞ এ অলরাউন্ডার। দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে ১৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের উইকেটটি শিকার করে এ রেকর্ড গড়েন তিনি। ঘরের মাঠে এ নিয়ে মোট ১৫২টি উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। সব মিলিয়ে ২০৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার উইকেট শিকারের সংখ্যা এখন ২৬৪টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ সামনে রেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে রান পেয়েছিলেন সাকিব (৫২)। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার ব্যাট অতটা ধারালো ছিল না। বল হাতে উজ্জ্বল সাকিব ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ দলের বোলারের কাছে আতঙ্কের নাম হতে পারেননি। হয়তো নতুন ব্যাটিং পজিশনে সেভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি ৩৩ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করেছেন সাকিব। এ পজিশনে দারুণ সফল তিনি। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ৬০৬ রান করেছিলেন। সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন তিনি। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপ ভাবনায় বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তাকে চারে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়েই চারে ব্যাটিং করা শুরু হলো তার। ১২২ রান তাড়ায় এই ম্যাচে ৪৩ বলে ১৯ রানে আউট হন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ২৬ ও চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ২২ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে বোলিংয়ের মতো ব্যাট হাতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের হাতেই। ফেরাটা দারুণ হলো সাকিবের।