শেখের বেটি হাসিনা তো হামার সুধা মিয়ার (ড. ওয়াজেদ মিয়ার ডাকনাম সুধা মিয়া) বউ। তাই (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যদি মোক একটা ঘর দিলি হয়, তা হলে মুই মরিয়াও শান্তি পানু হয়। যামার (যাদের) আছে, তারাই তো পায়। সবাই খালি দিবারই চায়, কিন্তু কেউ তো মোক দ্যায় না। মুই মানুষের জাগাত থাকো, মুই তো পাও না। মোর ভালো করিয়া নিন্দও (ঘুম) হয় না, সউগ সময় ভয়ের মদি (মধ্যে) থাকো। কখন যে জাগা খালি করি চায়! মোর ভাতার (স্বামী) নাই, তাও মুই বিধবা ভাতা পাও না। বয়স্ক ভাতাও মোক কেউ দ্যায় না।’
বড় আক্ষেপে কথাগুলো বলেন ৭০ বছর বয়সী জোবেদা বেগম। স্বামী মারা যাওয়ার সঠিক দিনক্ষণ বলতে পারেননি। সেটাও কমপক্ষে ৫০ বছর হবে। জন্ম গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ছান্দিয়াপুর গ্রামে। ১২/১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের দিনমজুর কলিম উদ্দিনের সঙ্গে। যুদ্ধের কয়েক বছর পরেই একটি কন্যাসন্তান রেখে পরপারে চলে যান কলিম। জোবেদা দ্বিতীয়বার আর বিয়ের পিঁড়িতেও বসেননি। মেয়েটিকে নিয়েই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। মেয়ের বিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দুই সন্তানের মা হওয়ার পর মেয়েটিও পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। দুই নাতি রাজু ও ভোম্বলের ভার পড়ে জোবেদার ওপর। এর পর দুই নাতিকে নিয়ে প্রায় ৪০ বছর পূর্বে চলে আসেন রংপুরের পীরগঞ্জে। এসে কাজ পান উপজেলা সদরের মরহুম আবদুল লতিফ মিয়ার চাতালে। সেই চাতালেই দুই নাতিকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন জোবেদা বেগম। নাতিরা বড় হলে নানি জোবেদাকে রেখে কাজের সন্ধানে চলে যায় ঢাকায়। তারা বছরে ২/১ বার আসেন পীরগঞ্জে নানিকে দেখতে। কিন্তু নানির স্থায়ী আবাস-নিবাস না থাকায় তারাও পীরগঞ্জে স্থায়ী হতে পারেননি।
২০১০ সালে চাতাল মালিক আবদুল লতিফ মিয়া মারা গেলে বন্ধ হয়ে যায় সেই চাতাল। সেখানে এখন বহুতল ভবন। চলে যায় দীর্ঘদিনের আবাসস্থল। এখন জোবেদা বাস করেন পীরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের পেছনে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রজাপাড়া গ্রামে। ঠিকাদার আনিছার রহমানের মালখানার পাশে খুপরি একটি ঘরে তার বসবাস। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে ওই খুপরিতেই দিন কাটছে তার। এখন বয়সের ভারে তেমন কাজকর্মও করতে পারেন না। দীর্ঘদিন বাজার এলাকায় থাকার সুবাদে দোকানিরা তাকে প্রতিদিনের খাবার মতো তরকারি, চাল দেন। তা দিয়েই চলে তার নিত্যদিন। শেষ বয়সেও তার আশা নিজের একটি ঘরের। সেটি তিনি চান প্রয়াত ড. ওয়াজেদ (সুধা) মিয়ার স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। প্রধানমন্ত্রী অসহায় মানুষদের ঘর দিচ্ছেন, এ কথা শুনে তিনি যারপরনাই আনন্দিত। তিনিও একটি ঘর পাবেন, এ আশায় জোবেদা বেগমের দিন কেটে যাচ্ছে। সেই দিনটি কি জোবেদার জীবনে আসবে? সেটাই এখন দেখার।