কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৪ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। গতকাল সোমববার সকালে টেকনাফ ২ বিজিবি ও মিয়ানমার ৪ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
ফেরত আসাদের মধ্যে রাঙ্গামাটিরে আটজন, বান্দরবানের তিনজন, টেকনাফের ১২ জন এবং রাজশাহীর একজন। এই বাংলাদেশিরা দুই থেকে সাড়ে পাঁচ বছর মিয়ানমার কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তরা বিভিন্ন সময়ে নাফ নদী ও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এবং মালয়েশিয়ায় যাত্রাকালে আটক হয়েছিলেন।
বিজিবি জানায়, মংডুতে বেলা ১১টায় টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার সামরিক জান্তার মংডুর ৪ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল লিন অং নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেরত নাগরিকদের নিয়ে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছায়। পরে দুপুর দেড় টার দিকে জেটি ঘাটে ২ অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, টেকনাফ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর রুবাৎয়াত কবীর, অপারেশন অফিসার লে. কর্মকর্তা মুহতাসিম শাকিল, এডিস নাজমুল হুদা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, ‘বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৪ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা মালয়েশিয়া ও সাগরে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমারের হাতে আটক হয়েছিল। তাদের সাজাভোগ শেষে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়। সে দেশের কারাগারে আরও বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।’
সবচেয়ে বেশি সাজাঁ ভোগকারী রহমত উল্লাহ ও মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সাড়ে পাচঁ বছর মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগ করেছি। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের ধরে নিয়ে যায়। সে দেশের কারাগারে অনেক কষ্ট। তারা ঠিকমত খাবার দিত না। কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশি কষ্টে দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। সরকারের চেষ্টায় দেশে ফেরত আসতে পেরে ধন্যবাদ জানাই।’
মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা ২৪ জন বাংলাদেশিকে পুলিশের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এর সমন্বয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী ধুবুয়া লামাপাড়া চাইরুই মারমার ছেলে পাইসেহলা, একই এলাকার টুইকাহার সান সুর ছেলে মংচিং মারমা, কুলার পাড়ার থৈইনু থৈইনুর ছেলে থৈঅংরী মারমা,টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউপি উত্তরপাড়া এলাকার মো.গিয়াস উদ্দিনের ছেলে জুনায়েদ,উলুবুনিয়া এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে রুবেল, লম্বাবিল এলাকার মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে আব্দুল কাদের,একই এলাকার জাকির আহমেদের ছেলে অলি আহমেদ, হ্নীলা দমদমিয়া এলাকার করিমু্ল্লাহর ছেলে ছেলে রহমত উল্লাহ, শাহপরীরদ্বীপ উত্তর পাড়ার লাল মিয়ার ছেলে এনায়েত উল্লাহ, একই এলাকার মৃত জালাল আহমেদের ছেলে সিরাজুল্লাহ, আবদুর শুক্কুরের (মিজি)ছেলে মোহাম্মদ আয়েস।
এ ছাড়া, নাইক্যংপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শরীফের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ,টেকনাফ সদর ইউপি বড়ইতলী এলাকার জহির আহাম্মদের ছেলে মো.সাদেক, আমানুল্লাহর ছেলে মো. সলিম, হ্নীলা এলাকার মো.হুসাইনে ছেলে ইমান হুসাইন, আলীপাড়া এলাকার মৃত মীর আহমেদের ছেলে নুরুল আলম, বান্দরবান জেলার কুহালং এলাকার ক্যচিং মংয়ের ছেলে চাই-চাই প্রু মারমা, একই এলাকা উথেইসেনের ছেলে পুকুয়েটসে, হ্নীলা দমদমিয়া এলাকার ইয়াসিনের ছেলে মো. সাবুর, রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী পূর্ব সোনাই ছড়ি এলাকার চাই থৈয়াইউ মারমার মেয়ে মিস অঞ্জনা মারমা, একই এলাকার আগ্রা মারমার ছেলে উচিংনুমারমা,কাশখালী পশ্চিম মোনাইপাড়া এলাকার থৈসামং মারমার ছেলে কংচিংউ মারমা, দুসরী পাড়া এলাকার উশোপ্রু মারমার ছেলে সাথোয়াইমং মারমা, পাওপাড়া এলাকার মংসা মারমার ছেলে থৈয়াইপ্রু অং মারমা।