জীবন্ত কিংবদন্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি শুধু গীতিকবিই নন, একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, রচয়িতা ও সুরকার। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। বারিধারার পার্ক রোডের বাসায় কথা হয় বরেণ্য এ ব্যক্তির সঙ্গে। সেই আড্ডায় উঠে এসেছে তার বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিময় কথা। লিখেছেন- তারেক আনন্দ
নায়িকা সুচরিতা
সন্ধি নামের একটা ছবি প্রযোজনা করব। নায়ক-নায়িকা থাকবেন রাজ্জাক-কবরী। কিন্তু কবরী না করে দিলেন। ঘটনা শুনে নায়ক রাজ্জাকও বিরক্ত হলেন। তিনি বলে দিলেন, ‘দেখ গাজী, এই ছবিতে বড় তারকাকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে আমি পারিশ্রমিকে ছাড় দেব। তুই ব্যবস্থা কর যেমনে পারিস।’ বিষয়টা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল আমার জন্য। অনেক ভেবেচিন্তে বলিউডের বিখ্যাত গীতিকবি জাভেদ আখতারকে ফোন করলাম। তার স্ত্রী শাবানা আজমিকে কাস্ট করার জন্য। মোটামুটি সব ঠিক হলো। কিন্তু সেখানেও জটিলতা দেখা দিল। পরে সত্য সাহা ঘটনা শুনে পরামর্শ দিলেন শবনমকে নেওয়ার জন্য। ওনার নাম মাথাতেই ছিল না। সত্যদা মনে করার পর আমি যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেললাম! যেভাবেই হোক শবনমকে নিয়েই কাজটি করব ঠিক করলাম। তিনি পাকিস্তান পিরিয়ড থেকেই তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা। তার স্বামী রবিন ঘোষের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। খুব ভালো পরিচয়। কথা বললাম। তিনি শবনমের নাম্বার দিলেন, তাকে বলেও দিলেন আমার কথা। শবনম তখন লন্ডনে। ফোনে কথা হলো। তিনি সম্মতি দিলেন। বড় নায়িকাই পেয়ে গেলাম আমরা। আর একজনকে নিলাম তিনি সুচরিতা। সে তখন এফডিসিতে এক্সট্রা আর্টিস্ট হিসেব কাজ করত। একদিন আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে কি মনে করে তাকে বললাম নায়িকা হবি? সে তো আকাশ থেকে পড়ল! মহাখুশী। পরে মেকআপম্যানকে বললাম তাকে নায়িকা বানিয়ে দে। মেকআপ করে সুচরিতা যখন সামনে এলো আমি তো দেখে অবাক!
যদি আমাকে জানতে সাধ হয়...
অনেক আগে একবার আমেরিকায় আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর দেখলাম সেখানে একমাত্র অতিথি আমি। আমার কথা শুনতে এসেছেন প্রায় তিন হাজার প্রবাসী। নিজেকে খুব একটা ভালো বক্তা মনে করি না। একটু বিব্রতই হলাম। কী দিয়ে শুরু করব ভাবছি। হঠাৎ একজন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘টেনশন করবেন না। আমরা খুব জ্ঞানী কথা শুনতে চাই না। আপনি আমাদের প্রিয় গীতিকবি। প্রিয় প্রিয় সব দেশের গান লিখেছেন আপনি। আজ আপনার কাছে বাংলাদেশের কথা শুনতে চাই, আপনার ব্যক্তিজীবন, পরিবার-পরিচয় জানতে চাই।’ আমি বলা শুরু করলাম-
‘যদি আমাকে জানতে সাধ হয়/ বাংলার মুখ তুমি দেখে নিও/ যদি আমাকে বুঝতে মন চায়/এ মাটির শ্যামলিমায় এসো প্রিয়/ এখানে বৃষ্টি ঝরে রিমঝিম শ্রাবণের সেতারে/ কুমারী নদীর বুক কেঁপে ওঠে প্রণয়ের জোয়ারে/ যদি কখনও দেখতে সাধ হয়
আমার মনের চঞ্চলতা/ তবে বরষার কোন নদী দেখে নিও’
আমি নিজেই অবাক হলাম হঠাৎ করে এমন কিছু লাইন বলতে পেরে। পরে সেই কবিতাটি গান হিসেবে প্রকাশ হয়। (চলবে)
কালজয়ী
কিছু
গান
ষ অনেক সাধের ময়না আমার
সুর : বশির আহমেদ
কণ্ঠ : বশির আহমেদ
ষ গীতিময় সেই দিন চিরদিন
সুর : আনোয়ার পারভেজ
কণ্ঠ : সাবিনা ইয়াসমিন
ষ চোখের নজর এমনি কইরা
সুর : আলাউদ্দিন আলী
কণ্ঠ : সৈয়দ আব্দুল হাদী
ষ কারো আপন হইতে পারলি না
সুর : আলাউদ্দিন আলী
কণ্ঠ : সৈয়দ আব্দুল হাদী
ষ পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম
সুর : সুবল দাস
কণ্ঠ : রুনা লায়লা
ষ পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেল
সুর : সুবল দাস
কণ্ঠ : রুনা লায়লা
ষ সবাই তো ভালোবাসা চায়
সুর : আলম খান
কণ্ঠ : এন্ড্রু কিশোর-সাবিনা ইয়াসমিন
ষ তোমারি পরশে
সুর : সত্য সাহা
কণ্ঠ : সুবির নন্দী-সাবিনা ইয়াসমিন
ষ আরে ও প্রাণের রাজা
সুর : আলী হোসেন
কণ্ঠ : উমা খান-প্রবাল চৌধুরী
ষ আয়রে মেঘ আয় রে
সুর : আনোয়ার পারভেজ
কণ্ঠ : রুনা লায়লা