তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে তাদের জীবনযাপনের করুণ কাহিনী শুনে তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে নিজ দপ্তরে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ আয়োজিত ওই সভায় জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন, তৃতীয় লিঙ্গের একজন কম্পিউটার অপারেটর ও অপরজন অফিস সহায়ক পদে মার্চের ১ তারিখ থেকে তার দপ্তরে মাস্টাররোলে চাকরিতে যোগ দেবেন। যতদিন পর্যন্ত তাদের চাকরি সরকারিভাবে স্থায়ী না হবে, ততদিন পর্যন্ত তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সম্মানি ভাতা পাবেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রাজশাহীতে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে যোগ্যতানুসারে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তৃতীয় লিঙ্গ নামধারীদের চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গ গুরুদের তালিকা তৈরি করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কারণ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে তার শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের লেখাপড়া করানোর জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। রাজশাহীর তৃতীয় লিঙ্গের জনগণের বাসস্থানের জন্য কাশিয়াডাঙ্গায় এক একর জমি অধিগ্রহণ করে বাসস্থান ও ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য সরকারের কাছে প্রকল্প পেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে কেউ যেতে চাইলে প্রতিটি উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর দুজনকে দুটি করে ঘর দেওয়া হবে।’
এ সময় পুলিশ বিভাগসহ অন্য প্রশাসনেও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে চাকরি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক।
‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র সহযোগিতায় ও ‘গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা’র অর্থায়নে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সংঘের সভাপতি মোহনা মঈন সভাপতিত্ব করেন। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল হক ও কামারুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম, সহকারী কমিশনার সানিয়া বিনতে আফজল, তানিয়া আক্তার লুবনা ও মুমতাহিনা কবীর, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী, আপস এর নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার পল্টু, জাতীয় মহিলা পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি কল্পনা রায় এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী আফসানা তানজুম ইরানী প্রমুখ।