ফিরোজ সাঁই থেকে শুরু করে জানে আলম পর্যন্ত, এর মধ্যে আমি, পিলু মমতাজ ও আজম খান, ফকির আলমগীরও রয়েছেন-জনপ্রিয়তার দিকটা যদি বাদও দেই, সাংস্কৃতিক দিক থেকে মূল্যায়ন করতে বলা হলে আমি বলব, আমাদের সবার থেকে এগিয়ে ছিল জানে আলম।
১৯৭২ সালের কোনো এক সন্ধ্যায় আমাদের পরিচয়। আমাদের রক্তে বইছিল তখন পপ গানের স্রোত। এটা তো সত্যি, আমরা এই কয়েকজনই তখন সময় ও স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলাম নতুন কিছু করার চেষ্টায়। যেটি শেষে দাঁড়াল পপ গানে।
ফিরোজ সাঁই তো গাইতে গাইতে সেই কবেই মারা গেল। গানের ফসল আর ঘরে তুলতে পারল না। আজম খানকে আমরা পপ গানের মুকুট বলি। এটাও একদম সত্যি। কিন্তু জানে আলমকে তো নাকোচ করার সুযোগ নেই। সেও কম জনপ্রিয় ও যোগ্য নন। আমি নিজে তার অসংখ্য স্টেজ শো দেখেছি। তার জনপ্রিয়তাও বাঁধ ভাঙা। হতে পারে সুপারস্টার খ্যাতিটা জানে আলম পাননি। কারণ, তার পুরো জীবনটাই কেটেছে ডাউন টু আর্থ ওয়েতে। অথচ এই মানুষটা করোনায় বিছানায় পড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত গানের জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন।
১৯৭২ সালে জানে আলম আমাকে এবং ফিরোজ সাঁইকে নিয়ে জামালপুর সুগারমিলে বাণিজ্যিকভাবে একটি গানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। টিকেটের মূল্য ছিল মাত্র ৫ টাকা। আমি পেয়েছিলাম ৩০০ টাকা। কিন্তু সে ওই অনুষ্ঠান থেকে কোন লাভ করেছে বলে আমার মনে হয় না। এই যে কনসেপ্ট, সেসময় আমরা এটা জানতামও না, বুঝতামও না। তখন অর্থ আয় করা যেত শুধু মাত্র যাত্রাপালার মাধ্যমে, এছাড়া ঢাকা শহরের দুই একটা স্টেজ শোতে। কিন্তু গান গেয়ে গ্রামে-গঞ্জে কিংবা মফস্বল থেকে টাকা আয় করতে দেখেনি কাউকে। যেটা জানে আলমের হাত দিয়ে বিস্তার পেয়েছে।
জানে আলমের মৃত্যুর খবরটা অনেক রাতে শুনতে পাই, খুব কষ্ট পেয়েছি। এর আগে কারও মৃত্যুর খবর শুনে এত কষ্ট পাইনি। এর কোনো বিশ্লেষণ আমি দিতে পারবো না। নিজেকে একা মনে হচ্ছে। আমারও বুঝি যাওয়ার সময় হয়ে আসছে।
ফেরদৌস ওয়াহিদ : সংগীতশিল্পী