করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় সরকার আজ থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে। এটি করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হবে কিনা এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিগ্ধ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ধরনের বক্তব্যই পাওয়া গেছে।
দেখা যাচ্ছে গত বছর মহামারীর সূচনায় ব্যবস্থা নিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগেছে এবং মাঠে নামতে বিলম্ব হয়েছে। লকডাউন যে সাধারণ ছুটি নয় তা ঘোষণায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত না হওয়ায় গতবার ঈদের ছুটির মতোই বাড়ি যাওয়ার হিড়িক ও ভিড় দেখা গেছে। এবারও বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যাচ্ছে। যতদূর বোঝা যাচ্ছে সরকার এবার দোকানপাট ও কলকারখানা বন্ধ করতে চাইছে না। কারণ গত বছর অর্থনৈতিক কাজকর্ম বিঘিœত হওয়ায় দারিদ্র্যের হার এক লাফে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের বহুকালের সাধনা তো দারিদ্র্য বিমোচন, তাতে এ রকম বিপর্যয়ে সরকার শঙ্কিত হয়েছে। ফলে প্রথমবারের অভিজ্ঞতা থেকে এই দফায় রোগ কিছু বেশি ছড়ালেও তা সামলানোর সাহস পাচ্ছে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
কিন্তু মনে হচ্ছে গতবারের ভাইরাসের তুলনায় এবার যেসব ভ্যারিয়েন্ট দেশে ঢুকেছে তার মধ্যে একটি বা সব কটির সংক্রমণ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেশি। এবার অল্পবয়সীরা আর নিরাপদ নেই, তাদের সংক্রমিত হওয়ার হার অঞ্চলভেদে পরীক্ষার অর্ধেক পর্যন্ত হচ্ছে। এবার দরিদ্র মানুষকে আর্থিক প্রণোদনা, চিকিৎসা সহায়তা ও দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার প্রস্তুতি সম্পর্কেও স্পষ্ট কোনো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এবার দ্রুত ব্যাপক হারে সংক্রমণের সময় চলবে রোজা, তখন সাধারণত মানুষের চলাচল এবং রাস্তার উন্মুক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতাও বাড়বে। সবটা মিলে সংক্রমণ কীভাবে ঠেকানো যাবে, তার জন্য কী কৌশল নেওয়া হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। মনে হয় গত ছয় মাস মানুষ প্রায় স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠায় এখন আর সহজে লকডাউনে আবদ্ধ হতে চাইছে না। ফলে পুনরায় সাবধানতা অবলম্বন ও বিধিনিষেধ মানার গুরুত্ব সম্পর্কে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার দরকার। এদিকে হেফাজতের মতো সংগঠনের অনেক মওলানা ধর্মীয় সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেও প্রচারণা শুরু করেছে। তাতেও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবেন এবং সতর্কতা মানার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়তে পারেন। সব মিলিয়ে সরকারের উচিত হবে করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা প্রদান করা।