ইপিজেডের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থিত বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নন-বন্ডেড সাব-কন্ট্রাক্ট করার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত শর্ত জুড়ে দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নন-বন্ডেড সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ওয়াশিং ও এমব্রয়ডারি করতে পাঠানোর সময় রপ্তানি চালান আটক করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করোনা মহামারীর কারণে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে রপ্তানি খাত। তাই রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে এসব শর্ত প্রয়োগ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। প্রয়োজনে ইপিজেডে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাইরের বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের ইন্টারবন্ডসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের অনুমোদনের
ক্ষমতা পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএকে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমানের দাবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করছেন তিনি। এ ধরনের কার্যক্রম চট্টগ্রামে ছাড়া আর কোথাও নেই বলে দাবি করলেও বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, তা সঠিক নয়। ৪০ বছর ধরেই রপ্তানি সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। সঠিক সময়ে শিপমেন্টের স্বার্থে ছাড় দিয়েছে এনবিআর।
এদিকে বিপুলসংখ্যক রপ্তানি চালান আটকে যাওয়ায় গত ২৩ মার্চ রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারকে চিঠি দেন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম। তবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। দ্রুত সিদ্ধান্ত না দিলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।
বিজিএমইএর একজন পরিচালক আমাদের সময়কে বলেন, এনবিআরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক রপ্তানি চালান আটকে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বন্ড কমিশনারেট ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিতে পারেন।
বিজিএমইএর সদ্য বিদায়ী পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর বিদেশি ক্রেতার নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়াশিং ও এমব্রয়ডারির জন্য ইনল্যান্ড এলসির ভিত্তিতে চালানের মাধ্যমে বিভিন্ন কারখানায় পাঠানো হয়। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এভাবেই কাজ চলছিল। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা এ ধরনের চালান আটক করে বিভিন্ন দলিলাদি যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত বিচারাদেশে উচ্চহারে জরিমানা করছেন। এ বিষয়ে আমাদের অসংখ্য সদস্য অভিযোগ দিয়েছেন। এতে নির্দিষ্ট সময়ে চালান রপ্তানি করতে না পারায় স্টকলটে চলে যাচ্ছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। এ বিষয়ে বিজিএমইএ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কমিশনার কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এমনিতেই করোনা মহামারীর কারণে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা চলছে। রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বার্থে বিদেশি ক্রেতার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে এ বিষয়ে নমনীয় মনোভাব পোষণ করা উচিত।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিজিএমইএ সদস্য ৬৮৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাকি ২৯৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৮ প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানিকাজে নিয়োজিত আছে। আট বছর আগেও পোশাকশিল্পের মোট রপ্তানিতে চট্টগ্রামের ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু অবকাঠামোগতসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ইপিজেডসহ বর্তমানে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, পোশাকশিল্পের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এখানে এই ব্যবসা বন্ধের উপক্রম। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার এ শিল্পে প্রণোদনা দিচ্ছে। অথচ সরকারি কর্মকর্তারা ব্যবসাকে জটিল করছেন।
নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে রপ্তানি পণ্যের কাজের সুযোগ দিলে অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে দাবি করে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম ইপিজেডে আমরা বিগত দুই বছরের তথ্য চেয়েছি। চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের আর কোথাও এই প্র্যাকটিস নেই। এনবিআরের নিয়মনীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আমি যাচাই করে দেখেছি তিন বছর আগেও এ ধরনের কাজ এখানে হতো না। বন্ড প্রতিষ্ঠান মানে হলো মুচলেকা দিয়ে ব্যবসা করা। বন্ড প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক বন্ড প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ নেই।