ওয়াজ মাহফিলে ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে আলোচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা থেকে রফিকুলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতেই তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপেক্ষাকৃত খর্বকায় ২৭ বছর বয়সী রফিকুল ২০১৯ সালের শেষ দিকে গোপনে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম আসমা, যিনি রফিকুলের ভাবির চাচাত বোন। বিয়ের আগে কয়েক বছর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবারের কেউই তাদের বিয়ের বিষয়টি জানতেন না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আসমার গ্রামের বাড়ি নিজের বড় ভাইকে নিয়ে কনে দেখার উদ্দেশ্যে যান রফিকুল। কিন্তু আসমার পরিবারের সদস্যরা রফিকুলের সঙ্গে বিয়েতে রাজি হননি।
এদিকে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল বিকালে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নেত্রকোনা শাখা। এ সময় আয়োজকরা রফিকুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, রফিকুল ইসলাম এখন কোথায়
আছেন, তা তাদের জানা নেই। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা বলছে না। তাকে দ্রুত মুক্তি না দেওয়া হলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলামের বড় ভাই রমজান মিয়া জানান, তার ভাই মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ধর্মীয় সভা করে নিজের বাড়িতে আসেন। রাতের খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে র্যাব পরিচয়ে কিছু লোক প্রায় ১৯টি গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে। পরে রফিকুল, তার বড় ভাই বকুল মিয়া ও তার দূরসম্পর্কের ভাতিজা এনামুল হককে তুলে নিয়ে যায়। পরে বকুল মিয়াকে রাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্য দুজনের খোঁজ তাদের জানা নেই। তার দাবি, রফিকুল ইসলামের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনসহ তাদের পরিবারের ছয়টি ফোন জব্দ করে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলার জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর কাইয়ুম, হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আসাদুর রহমান আকন্দ, মাওলানা তোবাইদ কাসেমী প্রমুখ। হেফাজতের নেতারা দাবি করেন, রফিকুল ইসলাম মাদানী তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে রফিকুল সবার ছোট। তার বাবা মৃত শাহাবুদ্দিন। রফিকুল নেত্রকোনার মালনি এলাকায় জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে লেখাপড়া করার সময় ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে আলোচিত হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় উসকানিমূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের অভিযোগ আছে অনেক দিন আগে থেকেই। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভকালে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে রফিকুলকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।