করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই মৃত্যু কমছে না। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন মারা যাচ্ছেন। আগামী দিনগুলোয় করোনার বিস্তার আরও ব্যাপক হতে পারে- এমনটিই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কমাতে করোনা মোকাবিলায় সোমবার থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- যারা বিধিনিষেধ মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি যে হারে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে, এতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প ছিল না।
গত বছর আমরা দেখেছি- রোগীর সংখ্যা যখন খুব বেশি বেড়ে গিয়েছিল, তখন শুধু কোভিড রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়, নন-কোভিড সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তাই এখন যখন আবার সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে, তখন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এক বছরের বেশি ধরে করোনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত বছর দীর্ঘ লকডাউন গেছে। তখন অনেকে জীবিকা হারিয়েছেন। যে দারিদ্র্যের হার ২০১৯ সালের শেষের দিকে ২০ শতাংশের মতো ছিল, সেটি বেড়ে ৪০-৪১ শতাংশ হয়ে গেছে। অর্থাৎ দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই শুধু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ আরোপ করলেই হবে না, এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে সাহায্য-সহযোগিতার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
গত বছর সাধারণ ছুটি চলাকালীন সরকার প্রান্তিক মানুষের জন্য যে বরাদ্দ দিয়েছিল, তা যথাযথভাবে তাদের কাছে পৌঁছায়নি। বিধিনিষেধ যত কম সময়ের জন্য হোক না কেন, হঠাৎ কাজ হারানো মানুষকে সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। করোনা ও ক্ষুধা- উভয় থেকে বাঁচতে হবে। তাই এ দুটিই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। আর সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য চলমান টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে আনতে হবে। এ ছাড়া বিধিনিষেধের সময় যদি আর বৃদ্ধি করা নাও হয়, তা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে যে শিথিলতা তৈরি হয়েছিল- তা দূর করার জন্য জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।