‘আমগোর মাথায় হাত, গতবার মেলা হয়নি, এবারও না হলে পথে বসার জোগাড় হবে।’ এভাবেই হতাশা ব্যক্ত করলেন গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুর রথখোলা সড়কে কুটির শিল্পের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পঞ্জিকার হিসাবে ১৪ এপ্রিল এবারের বৈশাখ উদযাপনের কথা। কিন্তু করোনায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনই বাধাগ্রস্ত, সেখানে জনসমাগম-নির্ভর মেলা পার্বণ কল্পনাই করা যায় না। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা এবারও থমকে গেছে। ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে ঘোষণা হয়েছে, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের মেলা পার্বণ নিষিদ্ধ।
তবে আমাদের সময়ের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তাদের আশার বাণী শোনালেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে যারা করোনার আগে থেকেই জড়িত, তাদেরকে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হবে। তা ছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে মেলা আয়োজনের সুযোগ দেওয়া হবে।
শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে প্রধান ফটকের পাশেই পাটি ঘর, সজয় শীতল পাটি ও রবিউল মৃৎশিল্প নামে তিনটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সামগ্রীর দোকান। রবিউল মৃৎশিল্পের মালিক আঙ্গুর মিয়া জানালেন, খুচরার পাশাপাশি এখানে পাইকারি বিক্রি হয়। পটুয়াখালী থেকে মাটির তৈরি সামগ্রী আসে। তা ছাড়া বাঁশের সামগ্রী নরসিংদী ও কালিয়াকৈর এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে দোকান সাজানো হয়েছে। পাশেই রাজবাড়ি মাঠে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা মেলে। করোনার কারণে গত বছর মেলা হয়নি। এবারও হচ্ছে না। মেলা হলে দৈনিক কম করে হলেও দশ হাজার টাকা আয় হতো। তাদের অনেক ক্ষতি হবে বলে জানালেন আঙ্গুর মিয়া।
মহানগরের রথখোলা সড়কে যেতে যে কোনো পথচারীর চোখ একবারের জন্য হলেও কুটির শিল্পের দোকানে আটকে যাবেই। দোকানের সামনে সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো সামগ্রীতে চোখ বুলালে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়। দোকানের সামনে সুখী গেরস্ত গৃহিণীর প্রতীক শিকেয় মাটির হাঁড়ি ঝুলানো। হয়তো ওই হাঁড়িতে এবারও মুড়ি মুড়কি চড়বে না। বাঙালির অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাঙালি আনা এখনো ষোলোআনা। সরা বছরই মুড়ি মুড়কি পাতে থাকে। বৈশাখে গুড়মাখা মুড়ি মুড়কির কদর বাড়ে। মাটির ব্যাংক, মাটির তৈরি রঙ-বেরঙের হাতি-ঘোড়া-দোয়েল দেখে ফেলে আসা শিশুকালের স্মৃতি মনে হবে না এমন বাঙালি নেই। মোড়ানো শীতল পাটির মাথায় কৃষকের মাতলা। মাছ ধরা শখের পলো একটার পর একটা সাজানো। গেরস্ত গৃহিণীর নিত্যদিনের সাংসারিক পণ্য বাশের ঝাঁকা, উড়া, চালুনি, টাপা, কুলা সবকিছু কেমন বধূর হাতের ছোঁয়ার অপেক্ষায় হাপিত্যেস করছে। আধুনিক অন্দরমহলের কারুকার্যময় মাটির ফুলদানি। মাটির ফুলের টব কিংবা প্লাস্টিকের টব সবই আছে। আরও আছে পাটের দড়িতে বোনা নবজাতকের দোলনা। বৈশাখ মানেই পান্তা ইলিশ। আর মাটির থালা হলে তো কথাই নেই। মাটির থালা, মাটির গ্লাস, পানি রাখার মাটির পাত্র সবই আছে।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন গাজীপুর শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম জানালেন, রুটিরুজির আগে মানুষের জীবন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কোনো প্রকার মেলা হচ্ছে না। করোনার কারণে অন্য অনেকের মতো দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাগণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ছে। সরকার ওই সব উদ্যোক্তার জন্য ১০০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। গাজীপুরেও জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার অর্থ বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।
মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের সরকারি প্রণোদনা হিসেবে নগদ ঋণ দেওয়া হবে। কুটির শিল্পের উৎপাদনে জড়িতরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। প্রত্যেককে কমপক্ষে এক লাখ, প্রয়োজনে আরও বেশি ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা।