নাসির আহমেদ
ছাদহীন ঘরে
কয়েক টুকরো মেঘ
ভেসে আছে মাথার ওপরে
যেন ছাতা চৈত্রদাহে
উঁচিয়ে ধরেছে কেউ খুব মমতায়
আমি হাঁটি। থমথমে বিষণœ মেঘও
সঙ্গে সঙ্গে যায়
সে জানাতে চায় তারও
মনের ভেতরে চাপা গায় দুঃখ কিছু!
দুই দুঃখী এক নীলিমায়
দূরে থেকে কী আশ্চর্য মমতায়
কথা বলে পরস্পর মেঘ ও মানুষ;
নীরবতা কেমন বাক্সময় জানে মেঘ!
আমি এত কাছাকাছি আছি
তবু মানুষের কাছে পৌঁছে না আমার
কোনো কথা। ভালোবাসা মিথ্যে মনে হয়
প্রকৃতিই বরাভয় জোগাচ্ছে এখন।
অতল শূন্যতা যেন ভয়াবহ ফাঁদ
আমি যাচ্ছি সেই দিকে ছাদহীন ঘরে।
বাবুল তালুকদার
শূন্য দিয়ে শুরু
সবকিছু শুরু হয় শূন্য দিয়ে
একদিন স্বপ্ন, আশা ভরপুর হয়ে যায়
জীবন পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে
শূন্যতা থাকে না কোনো কিছুতে
আশপাশে ভরে যায় প্রেমী মানুষ
আলোর ঝলক হৃদয় কোণে বয়ে যায়।
সঠিক পথে চলে, কেউ বাঁকা পথে চলে
সূর্য উঠে আবার ডুবে যায়
সবকিছু কি নিজের হাতের মুঠোয়?
কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না
এখানেই মানব জীবনের শুরু ও শেষ।
সিরাজুদ্দৌলাহ বাহার
ছোট হয়ে এসেছে কবিতা
একদা অনেক বড় ছিল এ পৃথিবী
আরবভূমি থেকে বহুদূর ছিল চীনদেশ,
কবিদের হাতে হাতে দীর্ঘ সময়Ñ
লেখা হতো দীর্ঘকবিতা।
এখন পৃথিবী পুরো এসে গেছে হাতের মুঠোয়
বহুজাতিকতা থেকে বহু বেড়ে গেছে ব্যতিব্যস্ততা,
কবিদের ক্ষেত্রেও নয় ব্যত্যয়Ñ
ছোট হয়ে এসেছে কবিতা।
দুলাল সরকার
ফসলের মাঠ বড়
আশ্চর্য গোধূলিÑ বৃন্দাবন
তুমি আর কত ঠকাবে অযোধ্যা?
যদি ব্যতিক্রম না হতেই পারো
যদি পুরান থালাতেই ভাত বাড়ো;
রুষ্ট জীবনে যদি না ভাবনাগুলো
নতুন আগুনে শানিত না করো
ধ্যান যোগে যদি তুষ্টতা খোঁজো
যদি কলা কৈবল্যবাদীই হয়ে থাকো?
যদি বুঝতেই না শেখোÑ পৃথিবীটা সকলের
গর্ভদাত্রী সময়ের বীজ মানুষে প্রবিষ্ট
মানুষের জয়ে নিজেকে যুক্ত করো
জীবন পাতায় সময়ের নাম লেখো;
তীর্থের পুণ্য থেকে ফসলের মাঠ বড়
কৃষিতে মগ্ন হওÑ যৌথ জীবন বোঝো
শুভ ইচ্ছার প্রতি করো না কখনো অপচয়
রোধ করে উজ্জ্বল হও চেতনায়...
প্রতিবাদী ভূমিকায় শেখ কীভাবে দাঁড়াতে হয়।
আমিনুল ইসলাম
প্যারাডক্স
অথচ লক্ষ্মীপেঁচার দুইবেলা খোরাক জোটে না,
পদ্মগোখরোরও প্রজনন বিপন্ন
এমনকি প্রাণীবিদের অনাদৃত চোখের নাগালে
চিড়িয়াখানার কোলও দিনে দিনে শূন্যপ্রায়।
অথচ আমরা আজ তিনবেলা সর্বাঙ্গে দংশিত
নীল, কালো, বাদামি, মিশ্র এবং আরও
বহুবর্ণ বিষে ভরে গেছে আমাদের সবুজ প্রাণের মূল।
আমাদের প্রাচীন বসত ঘিরে সারি সারি বিষ-বিষ গর্ত
এবং ছয়রঙা প্রান্তরের সহস্র সবুজ পাতায়
অযুত হরফে লেখা যে সুদুর্লভ পা-ুলিপি,
যা আমাদের জিহ্বার আদি পাঠশালা,
আঁধার রঙের হুমকির মুখে আজ সেও।
সাপ নয় তবু সাপ প্রতিদিন রেকি করে যায়
আমাদের সুস্বপ্নের প্রতিটি একাদশী, প্রতিটি পূর্ণিমা।
অথচ আমরা ভুলে আছি ওঝার মন্ত্রের স্বরলিপি।
হাদিউল ইসলাম
বিবিধ সন্দেহ
এবং পেছনে কৃতদাস, সম্মিলিত করতালিবৃন্দ
এবং সমুখে কৃতদাস, সম্মিলিত করতালিবৃন্দ
ডানে বাঁয়ে বিবিধ সন্দেহ
মুখোশ আসে মুখোশ যায়, চিরস্থায়ী প্রেক্ষাপট
তৈরি হলে তখন অসুস্থ ডোম ফোঁড় কাটে
লাশের শরীরে
এক আলোভুক অন্ধকার
তামাশা অপেরার ব্যানারে চলছে দেশপ্রেম
সব পথ গেছে হাঙ্গরের হা-এর দিকে...
শিবলী মোকতাদির
মহিমাগঞ্জ
আসো আসো ট্রেন অপেক্ষা করি
কতদূর বেঁকে সোজা হবে তুমি
ভোরের মালতি খোঁপা হতে ঝরে
রোদে ছায়া নেই হাওয়া মৌসুমি।
চক্রবৃদ্ধি হারে এখানে শরৎ বাড়ে
আকাশে থাকে মেঘ, প্রজাপতি
পালিয়ে যাচ্ছি চুরি করে তাকে
সঙ্গে নেওয়ার দিলে না তো সঙ্গতি!
রাশি রাশি লোক কোথায় যে যায়?
বৃষ্টি ঠেলে কেউ বা পড়ে ঝড়ে
ছাতা আর মাথা ভিজে একাকার
পুরনো পুরুষ কেঁদে মরে অন্তরে।
কায়া ঘন হয় সন্ধ্যা নেমে আসে
খাঁ খাঁ করছে শূন্য টিকিট ঘর
সচেতনভাবে সোনার বালাটা দেখি
রুপোর আলো ঝলসালো তারপর।
এলে তুমি ট্রেন লোহার কারবারি
এখানে সেখানে ফুটো-ফাটা স্পঞ্জ
ফুলের মধ্যে পদ্ম আমার প্রিয়
তাকে দেখতেই যাচ্ছি মহিমাগঞ্জ।
অনিন্দ্য জসীম
পাখিচাষী
শুধু কবুতর কেন গাঙচিল, মাছরাঙা চাষ করো
পাশে নদী বা হাওড় থাকলে পানকৌড়ি চাষ করতে পারো
ওদের ডুবসাঁতার জলকেলি দেখে দেখে
তোমার অজস্র অলস দুপুর মহিমান্বিত হতে পারে
মনের কোরক খুলে জলপদ্মের পাপড়ি
মেলে দিতে পারো সোনালি ডানায়।
প্রয়োজনে একটা কুঁড়েঘর বানাও
চড়াই চাষ করো, কলাবিদ্যায় চড়াইয়ের জুড়ি নেই
বারান্দায় শুয়ে-বসে ওদের প্রণয়কৌশল
ওড়াউড়ি দেখার মজাই আলাদা
পরকীয়ায় আগ্রহী হলে বাবুই চাষ অনেক লাভজনক
নারকেল গাছের পাতায় ঝুলে থাকা স্বপ্ন-নীড়ে
গড়ে তুলতে পারো তোমার ইচ্ছার সাময়িক সংসার
বিরহ ভালো লাগলে দক্ষিণের কদম গাছে
কোকিলও চাষ করতে পারো
সারারাত খোলা জানালার মতো একা
তার চিরায়ত সুর তোমাকে ঘুমুতে দেবে না
নদীর পাড়ের বাঁশঝাড়ে কয়েকটা দোয়েল চাষ করো
গান শুনতে শুনতে কেটে যাবে তোমার মুগ্ধ বিকেলে
তুমিও শিখে যাবে শিস দিয়ে গান গাওয়ার বনেদি কৌশল
জলৌকার ভয় না থাকলে কুড়া ও ডাহুক চাষ করতে পারো
উত্তেজিত হবার সহজ কৌশল অনায়াসে জেনে যাবে।
কারো প্রেমে পড়লে বউ কথা কও চাষ করো
দেওয়ান শামসুর রকিব
আত্মা
আমি যাকে আত্মা
দিয়েছিলাম
সে পালিয়ে গেল
বাঁকাচোরা পথে।
মানুষের আত্মা
একটাই থাকে
আমার তো নেই?
আমি বাঁচতে চাই!
শফিক আজিজ
করোনাকালের ভাবনা
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কী না জানি না,
তবে আগুনের সঙ্গে নারীরই সখ্য বেশিÑ
এই সত্য পুনঃউপলব্ধি হলো করোনাকালে।
পুরুষ দপ্তর-কর্ম সব থেকে নিষ্কৃতি পেল;
নারী তিনবেলা হেঁশেলেই পুড়ল আর পুড়াল।
ফলত, নারী নিজে পুড়তে পারে সহজে
আর সহসা পারে পুরুষকেও পোড়াতে।