কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলসহ জোড়া হত্যা মামলার এজাহারবহির্ভূত আসামি রাব্বী ইসলাম ওরফে অন্তুর মায়ের হাতে রান্না করা গরুর মাংস দিয়ে দুপুরের ভাত খেয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয় হত্যাকারীরা। এর আগে একই বাসায় অবস্থান করে সোহেল হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে তারা। এরও আগের রাতে বৈঠক হয় মামলার আসামি সাজেনের বাসায়। হত্যাকাণ্ডে ফেনী থেকে আসা অজ্ঞাত এক ব্যক্তিও অংশ নেয়। গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক এমন জবানবন্দি দিয়েছেন অন্তু। শুধু তাই নয়, তিনি চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার আসামিদের বিষয়ে আরও অনেক তথ্য দিয়েছেন পুলিশকে। রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহান সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, আসামি অন্তুর জবানবন্দি, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয়ভাবে তদন্তে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ‘হিট স্কোয়াডের’ ৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিমের সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া হত্যা মামলার এজাহারবহির্ভূত আসামি রাব্বী ইসলাম ওরফে অন্তু ও এহাজারভুক্ত আসামি জিসান মিয়াকে গত রবিবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিসানকে নগরীর সংরাইশ থেকে ও রাব্বী ইসলাম অন্তুকে দেবিদ্বার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
জিসান মিয়া এ হত্যা মামলার ৮ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি। তিনি সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকার নুর আলীর ছেলে। রাব্বী ইসলাম ওরফে অন্তু নগরীর সংরাইশ পশ্চিমপাড়া এলাকার বাদল মিয়ার ছেলে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার এজাহারভুক্ত ১১ আসামির মধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। অন্তুর নাম এজাহারে না থাকলেও হত্যাকা-ে সম্পৃক্ত অন্য আসামিদের তথ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে এ মামলার ৪ নম্বর আসামি সুমন, ৬ নম্বর আসামি আশিকুর রহমান রনি, ৭ নম্বর আসামি মো. আলম মিয়া ও ৯ নম্বর আসামি মাসুমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ১১টায় কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী থেকে জিসান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে রাব্বী ইসলামকে দেবিদ্বার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে তাদের কুমিল্লার আদালতে নেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ৫ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার প্রধান আসামি শাহ আলমসহ অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর বিকালে নগরীর সুজানগরসংলগ্ন পাথুরিয়াপাড়া এলাকায় মেসার্স থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে প্রকাশ্যে গুলি করে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র সৈয়দ মো. সোহেল এবং তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলরের ভাই সৈয়দ রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।