একতাই বল
ভাবসম্প্রসারণ : সবাই মিলেমিশে কাজ করার মধ্যে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি সবাই মিলে যে কোনো কঠিন কাজও সহজে সমাধা করা যায়। একজনের জন্য যা বোঝাস্বরূপ, দশজনের জন্য তা একটি লাঠির মতোই হালকা। তাই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মধ্যেই সফলতার চাবিকাঠি নিহিত।
মানুষ পারিবারিক জীব। পরিবারের প্রত্যেকে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে গড়ে উঠেছে মানবসমাজ, মানুষের একতাবোধ। তাই মানবজীবনের অস্তিত্বের সঙ্গে একতার গভীর সম্পর্ক। মানুষকে সব সময় প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়। তার শত্রুর শেষ নেই। প্রতিকূল পরিবেশে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য মানুষের দরকার সংঘবদ্ধ শক্তির। একতাবদ্ধ জীবনে আছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কোনো শক্তিই পদানত করতে পারে না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে বাঙালি একতাবদ্ধ হয়ে অধিকার আদায়ের জন্য পাকিস্তানি শাসক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয় লাভ করেছিল। উদাহরণ হিসেবে আরও বলা যেতে পারে শওকত আলীর ‘একসূত্রে’ গল্পের কথা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এক গ্রাম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি সমাজসেবার লোকজন ওই ঘটনাস্থলে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার আগেই দেখে, আরশাদ খাঁ গ্রামের মানুষকে নিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ফেলেন। গ্রামের মানুষের একতাবদ্ধ কাজ দেখে সমাজসেবার কর্তৃপক্ষ খুবই খুশি হয়। তাই একতার কল্যাণ প্রতিফলিত হয় ব্যক্তি, সামাজিক ও জাতীয় জীবনেও। একজনে যে কাজ করতে পারে, দশজনে এর বহুগুণ কাজ করা সম্ভব। এভাবে জাতি একতার গুণে বড় হয়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- টহরঃু রং ংঃৎবহমঃয. অর্থাৎ একতাই বল। আজকের বিশ্বে যারা উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত, তারা নিজেদের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। যে জাতি ঐক্যবদ্ধ নয়, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব। ব্যক্তির ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবহীন নিঃসঙ্গ জীবন যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি একতাহীন জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
একজন মানুষের শক্তি বা সামর্থ্য খুবই সীমিত। তাই ব্যক্তিজীবনের স্বার্থে, জাতীয় জীবনের কল্যাণে এবং মানবজাতির মঙ্গলের জন্য মানুষের একতাবদ্ধ থাকা একান্তই অপরিহার্য। কেননা একতাই বল, একতাই শক্তি।