২০০২ সালে একটি দুর্ঘটনা জীবন বদলে দেয় ফাল্গুনী সাহার। পাশের বাড়ির ছাদের সঙ্গে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারাত্মক আহত হন। শরীর থেকে দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হয়। তবে দুই হাত হারিয়েও বসে থাকেননি তিনি। অদম্য চেষ্টা নিয়ে এগিয়ে চলা সেই ফাল্গুনী পড়াশোনার পর্ব শেষে চাকরি করছেন। এবার তিনি শুরু করলেন জীবনের আরেকটি অধ্যায়। সংসার জীবনে প্রবেশ করেছেন সংগ্রামী এ নারী।
ফাল্গুনীর বরের নাম সুব্রত মিত্র। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা সদরের এই যুবককে ছেলেবেলা থেকেই চেনেন ফাল্গুনী। তবে দুজনের বন্ধুত্ব মাত্র পাঁচ বছরের। অবশেষে বৃহস্পতিবার হিন্দু রীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। সাত পাকে বাঁধা পড়েন দুজন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই পরিবারের সম্মতিতে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী শংকর মঠ মন্দির প্রাঙ্গণে বিয়ে হয় সুব্রত ও ফাল্গুনীর। স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয়রাও হাজির হন তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে। এ সময়
বর সুব্রতের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন সবাই।
সুব্রত পটুয়াখালীতে বেসরকারি সংস্থা কোডেকের ফিল্ড অফিসার। আর ফাল্গুনী বরিশাল ব্র্যাক অফিসে সহকারী এইচআর পদে কর্মরত রয়েছেন। দুজনের বাড়ি গলাচিপা উপজেলায়। তবে ফাল্গুনী বরিশাল শহরের ব্রজমোহন কলেজ সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।
ফাল্গুনী জানান, দুই হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নিজেকে কখনো দুর্বল ভাবেননি। ২০১১ সালে গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাস করেছেন ২০১৩ সালে উত্তরা ট্রাস্ট কলেজ থেকে। এরপর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট বিভাগে। ২০১৮ সালে অনার্স এবং এরপর মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে ঢুকেন তিনি।
ফাল্গুনী বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো বিষয় নয়। আমাদের বিয়েটা উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করি। আমি বলব, আমার এ পর্যন্ত পৌঁছাতে কোনো ধরনের প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়নি বরং সবার আন্তরিকতা দেখেছি। আপনারা সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন, সামনের দিনগুলোতে যাতে আমরা ভালো থাকতে পারি।
সুব্রত মিত্র বলেন, ফাল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। সে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত, তখন ফেসবুকে কথা হতো। একটা সময় বুঝতে পারি সে খুবই মেধাবী এবং পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তবে ওর পারিবারিক লাইফ বা সামনের দিকে আগানোর কোনো চিন্তা ছিল না। ফাল্গুনীর হাত নেই; এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।
সুব্রতের ছোট বোন শ্রাবন্তী জানান, আর পাঁচটা বিয়ে যেমন হয়; ফাল্গুনী-সুব্রতের বিয়েও সেভাবে হয়েছে। জমকালো আয়োজনের কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। মঙ্গলবার গায়েহলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই নাচ-গান। অতিথিদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে প্রদর্শন করা হয় আতশবাজিও।
শ্রীশ্রী শংকর মঠের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কর্মকার ভাষাই বলেন, এই বিয়ে আমার কাছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। বিয়েটি দেখে আমি অবাক হয়েছি। একটা মেয়ের দুটি হাত নেই, তাকে একটি ছেলে বিয়ে করেছে। এমন বিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে আমাদের। আমরা মঠ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে তাদের বিয়েতে সহযোগিতা করেছি।