প্রবৃদ্ধি ১৪.২২ শতাংশ ।। লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ ভাগ অর্জিত ।। সংশোধিত বাজেটে কাঁচি চলবে কম
মহামারী করোনার মধ্যেও রাজস্ব আহরণে ভালো করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৮৮ ভাগ। এ সময়ে কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ৮৫ ভাগ, ভ্যাট বা মূসকে ৮৮ দশমিক ৭৭ ভাগ এবং আয়কর খাতে ৯০ দশমিক ৬০ ভাগ।
রাজস্ব আহরণে ভালো অবস্থানে থাকায় সরকারকে খরচের ব্যাপারে নির্ভার থাকতে হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর বাজেট সংশোধনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হয়। কিন্তু এ বছর রাজস্ব আয় ভালো হওয়ায় বাজেট সংশোধনও হচ্ছে ছোট আকারে। অন্য সময় সংশোধিত বাজেটের আকার মূল বাজেটের চেয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম হয়। কিন্তু এবার সংশোধিত বাজেটের আকার মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র দেড় থেকে দুই শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও যথাসম্ভব কম হ্রাস করা হবে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি কমিয়ে ৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মূল বাজেটের চেয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার কমছে এক দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে এডিপির আকার প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ কমানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার রয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এটি কমিয়ে দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। বছরের শেষ দিকে এটি কিছুটা বাড়তে পারে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সব শেষে হিসাবে চলতি অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়কালে বাজেট ঘাটতি হয়েছে ৯ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে হয়েছিল ১২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
মূলত রাজস্ব আদায় ভালো হওয়া এবং ব্যয় কম হওয়ার কারণে এবার বাজেট ঘাটতি কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট আকারের একটি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বাজেটের প্রাথমিক আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
এনবিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মোটামুটি সন্তোষজনক। এনবিআর থেকে যেসব সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া সেবার মানোন্নয়ন এবং হয়রানি বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে।