মানিকগঞ্জের শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দুজনের স্পিডবোট ব্যবসা বন্ধের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় এক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নোয়াখালীতে নেতাকর্মীদের ওপর হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন পৌর নির্বাচনের দুই কাউন্সিলর প্রার্থী। আমাদের প্রতিনিধিরা আরও জানান-
মানিকগঞ্জ : শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দুজনের স্পিডবোট ব্যবসা বন্ধের অভিযোগ উঠেছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ সৃষ্টি করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতারা তাদের স্পিডবোট বন্ধ করে দিয়েছেন। দুই বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য
মোহসীন রাজু।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলার আরিচা ও পাবনার বেড়া উপজেলা কাজিরহাট নৌপথে ২২টির মতো স্পিডবোট যাত্রী বহন করে আসছে। এর মধ্যে মোহসীন রাজু ও আবদুস সালামের একটি করে স্পিডবোট এ নৌপথে চলাচল করত। তবে গত শনিবার থেকে তাদের বোট দুটি আর চলতে দেওয়া হচ্ছে না। দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর দাবি, জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও আরিচা স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম খান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুসের নির্দেশে হঠাৎ করে তাদের স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্পিডবোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম বলেন, মালিক সমিতির নির্দেশে ওই দুই প্রার্থীর স্পিডবোট বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ সৃষ্টির জন্য নয়, বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুটি স্পিডবোট বন্ধ করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম খান বলেন, তাদের স্পিডবোট বন্ধের বিষয়ে আমি কিছইু জানি না। তবে তাদের বৈধ কাগজপত্র থাকলে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব।
নোয়াখালী : নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে নিজ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর পাল্টাপাল্টি হামলা এবং বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন বিজয়ী ও পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী। নির্বাচনের পর থেকে অব্যাহত হামলার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন পরাজিত প্রার্থী মো. জাকির হোসেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড সোনাপুর লিংক রোড এলাকায় তাকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ৮নং ওয়ার্ডের ডালিম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মো. জাকির হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি টেবিল ল্যাম্প মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটে ডালিম প্রতীকের প্রার্থী নাসিম উদ্দিন সুনামের সঙ্গে হেরে যান তিনি। ফল ঘোষণার পর থেকেই বিজয়ী প্রার্থী সুনামের লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা আমার নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। গত ১৭ জানুয়ারি সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাউন্সিলর সুনাম বাহিনীর ক্যাডার এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারী হাফিজ উল্যাহ রবির নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী আমার সোনাপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসা এলাকার আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বসতঘরের দরজা-জানালা ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ করে এবং পরে বাড়ির সামনে আমার ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সবশেষ মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে সোনাপুর লিংক রোডের সামনে আমার ওপর ককটেল হামলা চালায় তারা।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে বিজয়ী কাউন্সিলর নাসিম উদ্দিন সুনাম বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে জাকির ও তার লোকজন আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি এবং দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে। এসব ঘটনায় আমার চার সমর্থক আহত হয়েছেন। জাকিরের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার নেতাকর্মীদের গালমন্দ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
ময়মনসিংহ : ভালুকার ভরাডোবা ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনি গত সোমবার রাত আটটার দিকে ভালুকা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে ও ভালুকা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে বিকাল চারটার দিকে উপজেলার ক্লাবের বাজার এলাকায় মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর চালানো হয়।
মোস্তাফিজুরের অভিযোগ, ভরাডোবা ইউপি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম তরফদারের সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।