দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার ১৩তম বাংলাদেশ
আমাদের দেশে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রামক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের মহোৎসব চলছে। দুর্নীতি থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হলে তা নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।
বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) তৈরি দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) এবার এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আগেরবার যা ছিল ১২তম। তবে দুর্নীতির স্কেলে স্কোরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত তিন বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের স্কোর ১০০-তে ২৬ পয়েন্ট। অপরদিকে বিপরীত দিক দিয়ে অর্থাৎ সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ পিছিয়ে হয়েছে ১৪৭। সিপিআই সূচকে বৈশ্বিক গড় স্কোরের (৪৩) তুলনায় এবারও বাংলাদেশের স্কোর (২৬) অনেক কম। গতবারের মতোই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের স্থবিরতা প্রমাণ করে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা আশঙ্কাজনক। এতে আবার প্রমাণ হলো যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার আমরা যে শানিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। দুর্নীতি রোধে আমাদের যেসব আইন ও অবকাঠামো আছে, তার সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হলো সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইন ক্ষেত্রবিশেষে অন্ধ হলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চোরাগলিতে আটকে যেতে বাধ্য। দুর্নীতি রোধ করতে হলে প্রতিটি সরকারি বিভাগ ও অধিদপ্তরকে নিজেদের বিভাগীয় তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থাকে সচল করতে হবে। আইনি রক্ষাকবচ ও স্বশাসিত বাজেট নিয়েও দুদকের নখদন্তহীন থাকা মূলত উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকারই নির্দেশক। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা।
শাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে, বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের দ্বারা সরাসরি পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোয় জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার ঘাটতি থাকলে তা আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও দুর্নীতিগ্রস্ত ও বেপরোয়া করে তোলে। এই চক্র থেকে বেরোতে হবে এবং সদিচ্ছা থাকলে সেটা যে সম্ভব, কাছের ও দূরের অনেক দেশই তা প্রমাণ করেছে। আমরা কেন পারব না? শুধু অতীতের বা ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়া দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করা সহজ কাজ। বর্তমানের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে সেটাই হবে আসল সাহসের কাজ। তেমন কিছু করে দেখাতে পারলেই দুর্নীতির রাস টেনে ধরা সম্ভব হবে।