রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রীদের ছয়টি আবাসিক হলে রাতে প্রবেশের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করেছে হল প্রশাসন। এতে বলা হয়েছে, রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশ করার কথা বলা হয়েছে।
হলে প্রবেশের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের হলে প্রবেশের নিয়মে এমন বৈষম থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।
আবাসিক হলের ছাত্রীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য কোনো ধরনের নিয়ম না করে শুধু ছাত্রীদের জন্য নিয়ম সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটির মাধ্যমে অনেক সময় ছাত্রীদের হয়রানিও করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দেওয়ার বিপরীতে বৈষম্যমূলক নিয়ম চালু করেছে। ক্যাম্পাসের মতো মুক্ত চর্চার জায়গায় এমন নিয়ম ছাত্রীদের মানসিক চাপ বাড়াবে। এছাড়া সারা দিন ক্লাসের পর টিউশনি, ক্লাব ও ব্যক্তিগত কাজ থাকতে পারে। তাই রাত সাড়ে ৮টা খুবই অল্প সময়। এমন কোনো ধরনের হয়রানিমূলক আইন থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন ছাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রীরা সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে। তৎকালীন সময়ে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা ছিল সন্ধ্যা ৭টা। পরবর্তীতে আন্দোলের পরিপ্রেক্ষিতে সান্ধ্য আইন ‘শিথিল’ করে সর্বশেষ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কোনো ছাত্রীর কাজ থাকলে নির্ধারিত সময়ের পরও হলে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু পরবর্তীতে গত ৯ মে সব হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিলে নতুন করে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
ছাত্রীদের হলে প্রবেশের নতুন সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর ফেসবুক গ্রুপ ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’-এ পোস্ট করে মেধা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রী হলে ঢোকার সময় রাত ১০টা থেকে ৮.৩০ করার মানে কী? এটা তো শীতকালও না! সান্ধ্য আইন নিয়ে এত কিছুর পরও কি এটা সান্ধ্য আইনের মডিফাইড ভার্সন? সন্ধ্যাই তো হয় এখন ৭টায়। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ কি? এটা কি আসলেও যৌক্তিক?’
বিশিষ্ট নাট্যজন অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসলে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এমন আইন করেছে সেটি জানা নেই। তবে এটি অতীতের সান্ধ্য আইনের চেয়ে ভালো। তবে এমন বৈষম্যও থাকা উচিত নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবার জন্য একই নিয়ম করা উচিত বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
ছাত্রীদের আবাসিক হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ফেরদৌসী মহল বলেন, ‘মূলত ওটা কোনো বিজ্ঞপ্তি নয়। এর আগে আমরা মেয়েদের ছয়টি হলে প্রাধ্যক্ষরা বসেছিলাম যে, ছুটির পর এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না। এ নিয়ে আমরা ছুটির পর হলের মেয়েদের সঙ্গেও কথা বলব এমনটাই বলা হয়েছিল প্রভোস্টদের। কিন্তু ভুলক্রমে এক হলের প্রভোস্ট নোটিশ আকারে দিয়ে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে সব হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে একটি কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের সমন্বিত সিদ্ধান্ত অনুসারে সময় সাড়ে ৮টা করা হয়েছে।’
আগে ৯টা পর্যন্ত হলে প্রবেশ করতে পারতেন ছাত্রীরা, সেই সময় কমিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ছাত্রীরা অনেক বেশি এলোমেলো জীবনযাপন করছে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের নামে অভিযোগ আসছে। ফলে তাদের হলে প্রবেশের বিষয়ে আগের চেয়ে সময় কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।’